লিটন কুতুবী::
দক্ষিণ পূর্ব উপকূলের জেলেরা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে নেমেই জলদস্যুদের কবলে পড়ে চরম বিপাকে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে ফিশিং ট্রলার নিয়ে জেলেরা গভীর সাগরে মাছ ধরার জন্য যায়। মাছ ধরারত অবস্হায় গভীর সাগরে ও উপকূলের নিকটবর্তী এলাকায় ডাকাতি করে বেড়াচ্ছে কয়েকটি জলদস্যু দল। সীতাকুন্ড হতে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বিস্তীর্ণ উপকূল জুড়ে যে সব জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে নেমেছে অধিকাংশ জেলেদের কপালে জুটেছে দুর্দশা। কুতুবদিয়া উপকূলের ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, চলতি বছর ২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন সাগর,নদী, হাওর এলাকায় মাছের প্রজনন সময় হিসেবে ইলিশসহ মা মাছ ধরা বন্ধ ঘোষনা করে সরকার। সরকারি নীয়মনীতি মেনে উপকূলের জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে যায়নি। ঘোষিত বন্ধ শেষ হলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা যথাসময়ে সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারেনি। গত এক সপ্তাহ পূর্বে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে জেলেরা এক যোগে নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। তার সাথে পাল্লা দিয়ে জলদস্যুরাও সাগরে ডাকাতি কাজে নেমে পড়ে।
গভীর সাগর ও উপকূলের তীরবর্তী এলাকায় গত দুই দিনে কুতুবদিয়া,বাঁশখালী,পেকুয়া,চকরি
বাঁশখালী উপকূলের ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদু শুক্কুর জানান, বাঁশখালী জলদী এলাকার তৈয়ব কোম্পানীর এফবি আল্লাহুর দান, শেকেরখীল এলাকার এফবি হাজি আনোয়ার-১, মানিক মাঝির এফবি মায়ের দোয়া-২৪৬ এ তিনটি ফিশিং ট্রলার থেকে জলদস্যুরা জাহাঙ্গীর মাঝি, আকতার হোসেন ড্রাইভার, মোঃ হানিফ মাঝি,মোঃ হাসেম, জাকের হোসেন,সাহাব উদ্দিন ড্রাইভার,আজগর মাঝিসহ বিভিন্ন ট্রলার থেকে মুক্তিপণের জন্য ৩২ জন জেলেকে জলদস্যুদের ট্রলারে আটক রেখে (০১৮৫৪৭৩৫৮৪৪) মোবাইল নাম্বার ও তাদের জিম্মায় জেলেদের মোবাইল নাম্বার থেকে মুক্তিপণ দাবী করে যাচ্ছে ট্রলার মালিকদের নিকট।
জলদস্যুদের কবল থেকে ফিরে আসা মানিক মাঝির সাথে কথা হলে তিনি জানান, জলদস্যুরা কুতুবদিয়া উপকূলের একটি ট্রলার যোগে সাগরে এসে এক একটি ট্রলার ধরে মাছ,জাল,মালামাল লুট করে দুই/চার জন জেলে তাদের ট্রলারে তুলে নিয়ে বাকি জেলেদের নৌকাসহ ছেড়ে দেয়। জলদস্যুদের হাতে আটক জেলেদের ছেড়ে দিতে জলদস্যুরা প্রতি ট্রলারের জেলে মুক্তি দিতে ৫/৬ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে আসতেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী জলদস্যুর কবল থেকে ফিরে আসা জেলে মনছুর আলম জানান, গত ৩১ জুলাই বাঁশখালী উপকূল হতে মাছ ধরার জন্য গভীর সাগরে যায়। এক সপ্তাহ পর শনিবার (৭আগস্ট) মাছ ধরে উপকূলে ফিরে আসার পথে মহেশখালী দ্বীপের সোনাদিয়া উপকূলের অদূরে পৌছলে শতাধিক জলদস্যু তাদের ব্যবহৃত ৪টি ট্রলার নিয়ে যৌথ মহড়া দিয়ে তাদের ট্রলারে উপর হামলা চালিয়ে মাছ,জাল,মূল্যবান মালামাল লুট করে প্রতি ট্রারের মাঝি,ড্রাইভার, জেলে তুলে নিয়ে আটক রেখে অনেক ট্রলার ছেড়ে দেয়।
তিনি ধারণা করেন, জলদস্যুরা মহেশখালী,কুতুবদিয়া, বাঁশখালী, চকরিয়া,পেকুয়া,হাতিয়া হতে পারে।
কুতুবদিয়া উপজেলা মৎস্যজীবি ফেড়ারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জলদস্যুরা চরম উত্তেজিত হয়ে সাগরে ডাকাতি করে বেড়াচ্ছে। বড়ঘোপ আমজাখালী গ্রামের এফবি মায়ের দোয়া, এফবি সাগর কন্যা, আলী আকবর ডেইল এলাকার এফবি কুতুব ফিশিং ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়লে মাছ,জাল মূল্যবান মালামাল লুট করে। বিগত তিন বছর পূর্বে উপকূলে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে জলদস্যু,ইয়াবাকাবারিদের জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসছিল। সাবেক ওসি দিদারুল ফেরদাউস কুতুবদিয়া উপকূলের জলদস্যুদের আটক এবং আত্মসমর্পণ করিয়ে জলদস্যু শুন্য থানা ঘোষনা করছিল। তখন জেলেরা সাগরে শান্তিতে মাছ ধরে। ইদানিং জলদস্যুরা আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠে।
কোস্ট গার্ড কুতুবদিয়া কন্টিজেন্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলদস্যুতার খবর পেয়ে সাগরে তাদের টহল জোরদার রেখেছে। শুক্রবার (৬আগস্ট) দুপুরে বাঁশখালী শেকেরখীল তৈয়ব কোম্পানীর এফবি আল্লাহর দান ফিশিং ট্রলারটি ১৭ জন জেলে নিয়ে সাগরে সাঙ্গু গ্যাস ফিল্ড এলাকায় ভাসমান অবস্হায় উদ্ধার করে। নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের দুইটি জাহাজ বর্তমানে সাগরে টহলরত আছে।











