আল্লাহর সাহায্য কামনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান

হেফাজতে ইসলামের আমীর ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী দেশে ক্রমবর্ধমান করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মহামারির এই কঠিন সঙ্কটময় পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে যার যার অবস্থান থেকে সকলপ্রকার গুনাহ ও অন্যায় কর্মকা- পরিহারপূর্বক তাওবা করে মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে।
.
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) এক বিবৃতিতে আল্লামা বাবুনগরী আরো বলেন, মানুষ যখন ব্যাপকহারে আল্লাহ তাআলার অবাধ্যতা, নাফরমানি, জুলুম-অত্যাচার ও কর্তব্যজ্ঞান ভুলে আত্মকেন্দ্রিক ভোগ-বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ তাআলা সতর্ক করার জন্য পৃথিবীতে বিভিন্ন বিপদাপদ ও শাস্তি নাযিল করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের ফলে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যার ফলে তাদের কৃতকর্মের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তাদের তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা রূম- ৪১ আয়াত)। অনুরূপ রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। এছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ৪০১৯)।
.
হেফাজত আমীর বলেন, বর্তমানে বিশ্বময় জুলুম-অত্যাচার ও পাপকর্ম মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কোন অন্যায়-অপরাধকর্ম নেই, যেটা সমাজকে আক্রান্ত করেনি। মানুষ অন্ধের মতো ভোগ-বিলাসিতা, যেনা, ব্যাভিচার, নেশায় লিপ্ত হচ্ছে। সর্বস্তরে নগ্নভাবে জুলুম-অত্যাচার, অধিকারহরণ, সুদ-ঘুষ, বিচারহীনতা ও শোষণ বিশ্বময় বিস্তার করেছে। করোনাভাইরাসের যে অপ্রতিরোধ্য প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, তাতে প্রতিয়মান হয় যে, এই মহামারি আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত এক কঠোর হুঁশিয়ারী ও সতর্কতা।
.
আল্লামা বাবুনগরী বলেন, করোনা মহামারির দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে তাই সকলের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, সকল প্রকার অন্যায়, জুলুম, পাপাচার ও বেইনসাফী থেকে বিরত হয়ে ভবিষ্যতে আর কখনো না করার সংকল্প করে খালেস মনে তাওবা করে আল্লাহমুখী হয়ে যাওয়া। ভবিষ্যত জীবনে আল্লাহ ও রাসূলের পরিপূর্ণ আনুগত্য, ইবাদত-বন্দেগী, বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথা সময়ে আদায়, রাসূল (সা.)এর সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণ-অনুকরণ, সৎকর্ম ও সাধ্যমতো মাখলুকের সেবা করা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দৃঢ় সংকল্প করা।
.
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অস্থির ও আতংকগ্রস্ত না হয়ে নিজেকে আল্লাহর নির্ধারিত তাক্বদীরের উপর সোপর্দ করতে হবে। সুস্থিরতার সাথে চিকিৎসকদের পরিপূর্ণ নির্দেশনা অনুসরণ করে চলতে হবে। বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাজার-ঘাট ও দোকানপাটে বিনা কারণে ঘুরাঘুরি থেকে বিরত থাকতে হবে। সবসময় পাক-পবিত্র ও অজুর হালতে থাকার চেষ্টা করতে হবে। হাঁচি-কাশি ও হাই তোলার সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে। খাবার গ্রহণের আগে-পরে ভালভাবে হাত ধৌত করতে হবে। বেশি বেশি তাওবা, ইসতিগফার, নফল নামায, কুরআন তিলাওয়াত ও যিকিরে থাকতে হবে। আল্লাহর দরবারে রোনাজারি করে তার সাহায্য ও রহমত কামনা করতে হবে। একমাত্র আল্লাহর দয়া, রহমত ও ইচ্ছা ছাড়া মহামারির এই দুর্যোগ কেউ রোধ করতে পারবে না।