আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি অভিযোগ যাচাই করা হবে: পিডি

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মাণে অনিয়ম বা ত্রুটি নিয়ে প্রত্যেকটি অভিযোগ সরেজমিনে যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. মাহবুব হোসেন।

শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার বুড়িগাড়ির খানপুর এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, একটি কাজ করতে গেলে অনিচ্ছাকৃত ভুল হতে পারে। সে বিষয়টি আমরা দেখছি। যে বিষয়গুলো বিভিন্ন মিডিয়াতে এসেছে। সেগুলো কি ভুল নাকি ইনটেনশনাল, সেটা আমরা যাচাই করছি। প্রত্যেকটা কেস, প্রত্যেকটা বিষয় আমরা অ্যাটেইন করবো, কোনোটাই আনঅ্যাটেন্ডেড থাকবে না।

তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সেরা উপহার ভূমিহীন, গৃহহীনদের বিনা পয়সায় গৃহ প্রদান। যেটাকে আমরা বলে থাকি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’, সারা বাংলাদেশে চলছে। চলমান কার্যক্রম বিষয়ে কোথাও কোথাও থেকে আমরা প্রতিবেদন পেয়েছি এবং মিডিয়াতে এসেছে কোথাও কোথাও সমস্যা হয়েছে। এ বিষয়গুলো গতকাল থেকে আমাদের প্রকল্প অফিসের ৫টি টিম বিভিন্ন জেলায় সরেজমিনে দেখছে। কী সুবিধা-অসুবিধা সেটা শনাক্ত করে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সেই কাজ করছি।

মাহবুব হোসেন বলেন, এর আগেই আমাদের সকল জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনকে কমিটি করার জন্য বলা হয়েছে। কারিগরি কমিটি করে প্রত্যেকটা ঘর সরেজমিন দেখে যদি কোনো নির্মাণগত ত্রুটি থাকে তাৎক্ষণিক মেরামত করবে। যদি সঠিক থাকে আমাদের জানাবে।

সরেজমিন পরিদর্শনের পর বগুড়ার শেরপুরে কয়েকটি ঘর আংশিকভাবে ধসে পড়া প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক বলেন, গতকাল আমরা ঘুরেছি মুন্সিগঞ্জ, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর; আজকে এসেছি বগুড়ার শেরপুর উপজেলায়। এখানে আমরা যেটা দেখলাম, শেরপুর খালের পাশে ২২টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল, এর মধ্যে ৭টি ঘরের টয়লেটের অংশ, পাক-ঘর ভূমি ধসের কারণে পড়ে গেছে।

ধসে পড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা আমরা বাইরে থেকে জেনেছি, এটা অবহেলা বা অনিয়ম জনিত কোনো সমস্যা হতে পারে। যেটি দেখলাম যে, টয়লেটের পেছনে আরসিসি পিলার দিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু সেটিও টিকে নাই। তার কারণ হলো পাশে এখানে বিশাল ফসলের ক্ষেত পানিটা যখন নিচ থেকে নিষ্কাশন হয় তখন প্রেসার পড়ে। এই কারণে এই সাতটি ঘরের পেছনে আরসিসি পিলার ভেঙে ধসে গিয়েছে এবং ড্রেনেজের পানির কারণে এটা হয়েছে।

সমস্যার সমাধান বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এই সমস্যা যাতে সমাধান হয় এখানে কমিটি করা হয়েছে। এখানে অলরেডি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। আর শস্য ক্ষেতের পানিটা যাতে ঘরের ওপর প্রেসার তৈরি না করে সে জন্য একটা স্থায়ী ড্রেনেজ সিস্টেম করে দেওয়া হবে। তার মাধ্যমে এই ঘরগুলো রক্ষা করা যাবে।

আশ্রয়ণের বাড়ি নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের নির্দেশনা ছিল নিষ্কণ্টক খাস জমি, ’৮৮ সালের বন্যামুক্ত এলাকা, প্লাবনে ভেসে যাবে, বন্যায় ভেসে যাবে, জলাবদ্ধতা হবে—এমন জায়গায় করবেন না। আপনারা দয়া করে এই জিনিস ভালো জায়গায় করবেন।

মাহবুব হোসেন বলেন, আমাদের সব ঘর কিন্তু খাস জমিতে হয়েছে। খাস জমি কিন্তু রেডিমেড বা বাড়ির ভিটা লেভেল তা না। অনেকগুলোই একটু ক্ষেতের লেভেলে রয়েছে। সবখানে যে জলাবদ্ধতা হবে তা না, কিছু কিছু জায়গায় অতি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন সেটি নিষ্কাশন এবং ঘর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, আমাদের বৃহত্তম কাজ, সারা বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম, সর্ববৃহৎ এক সাথে এক লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ পরিবারকে ভূমিহীন-গৃহহীনকে জমি ও গৃহদান এই কাজটি যারা করেছেন নবীন কর্মকর্তা, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সবাই কিন্তু সম্পৃক্ত। তাদের অবশ্যই আমরা ধন্যবাদ এবং স্যালুট জানাই। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।

অতিবৃষ্টি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নির্মাণে অনিয়মের কারণে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণের বেশ কিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ত্রুটির বিষয়টি সামনে আসতেই নড়ে চড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

শুক্রবার সকাল থেকে প্রথম দফায় সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করে পরিদর্শন শুরু করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫টি টিম। এর মধ্যে একটি টিমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

শুক্রবার মুন্সিগঞ্জ সদর এবং টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পরিদর্শন করেন মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বাধীন টিম। শনিবার বগুড়ার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয়ণের বাড়ি পরিদর্শন করছে এই টিম।

পরিদর্শনকারী টিমগুলোকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কিনা, তা যাচাই করার এবং ছবিসহ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অবহেলা ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে সরকার। অভিযোগ তদন্ত করে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।

‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত সর্বমোট এক লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমিসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট আধা পাকা বাড়ি দেওয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশে দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এবং জমি আছে ঘর নেই অথবা অত্যন্ত জরাজীর্ণ ঘর—এ রকম পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে বাড়ি নির্মাণ করে দেবে সরকার।