চবিতে মহান স্বাধীনতা দিবস

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাসমারোহে উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপিত হয়েছে। সকাল ৮ টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান কার্যক্রম সূচিত হয়। স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে চবি মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। এরপর পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার। অত:পর মাননীয় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুস্পামাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকাল ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় এক আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভাষণ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। সভায় সভাপতিত্ব করেন চবি মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর ভাষণে মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশলক্ষ বীর বাঙালি, শহীদ জাতীয় চারনেতা ও ‘৭৫ এ বর্বর হায়েনাদের হাতে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবৃন্দকে বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি মহিয়ষী জননী শহীদ জাহানারা ইমামকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। মাননীয় উপাচার্য বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের পটভূমি ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আলোকপাত করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিকামী বাঙালি জীবনের মায়া তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সশস্ত্র সংগ্রামে; বিশ^ মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। মাননীয় উপাচার্য বলেন, যে মহান নেতার আজীবন সংগ্রামে বাঙালি জাতি পেয়েছে মুক্তির দিশা; প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্র, আজ তাঁরই সুযোগ্য তনয়া মানবতার জননী সেই রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দক্ষ ও দূরদর্শী দেশ পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে উন্নয়নের মহাসড়কে। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন আজ বিশ^ মহলে প্রসংশিত। মাননীয় উপাচার্য দেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধারা অব্যহত রাখতে দেশের তরুণ সমাজকে জাতির জনকের সুমহান আদর্শকে ধারণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত থেকে জ্ঞান-গবেষণায় সমৃদ্ধ হয়ে আধুনিক, সৃজনশীল, নান্দনিক ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন আলোকিত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহবান জানান।
আলোচনা সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চ.বি. প্রক্টর ও অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আহমদ সালাউদ্দিন, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সফিউল আলম, সিনেট সদস্য প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ, চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব কে এম নুর আহমদ, শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. গোলাম কবীর, আইন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর এ বি এম আবু নোমান, অফিসার সমিতির সভাপতি জনাব এ কে এম মাহফুজুল হক, চ.বি. ক্লাব (ক্যাম্পাস ও শহর)-এর সদস্য জনাব সুলতানা সুকন্যা বাশার, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জনাব মসিবুর রহমান, কর্মচারী সমিতির সভাপতি জনাব মো. আনোয়ার হোসেন ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি জনাব মো. আবদুল হাই। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) জনাব দিবাকর বড়–য়া। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয় এবং শহীদদের সম্মানে দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সকালে চবি স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চবি শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিনবৃন্দ, হলের প্রভোস্টবৃন্দ, অফিসার সমিতি, চ.বি. ক্লাব (ক্যাম্পাস ও শহর), চবি মহিলা সংসদ, সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চ.বি. ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। আলোচনা সভা শেষে বঙ্গবন্ধু চত্বরে মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়াও মাননীয় উপাচার্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১০০তম জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ রাত ১২.০১ মিনিটে (২৫ মার্চ দিবাগত রাতে) বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মৃতি স্তম্ভে বিএনসিসি কর্তৃক বিউগল বাজিয়ে স্বাধীনতা দিবসকে স্বাগত জানানো হয়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহ বর্ণিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার শান্তি এবং দেশের উন্নতি-সমৃদ্ধি ও সার্বিক মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।