রাউজানের মেয়ে শাবানার জন্মদিন আজ

শফিউল আলম, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
বাবা মৃত মোহাম্মদ আবুল ফায়েজ চৌধুরী ও মা ফজিলাতুন্নেসা ঘরে জন্ম নেয় একসময়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা শাবানা। ১৯৫২ সালের ১৫ই জুন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম ডাবুয়া গ্রামের এলাকার গণি পাড়া গ্রামের গণি চৌধুরী বাড়ীর মেয়ে আফরোজা সুলতানা রত্না জম্ম গ্রহণ করেন। সেই পরিবারের বড় সন্তান ছিলেন। ছোট বেলায় অনেক বছর তাঁর পরিবারের সাথে ডাবুয়ায় শাবানার শৈশব কেটেছিল গ্রামে। ছোট বেলায় তাঁকে সবাই আফরোজা সুলতানা (রত্না) নামে গ্রামে পরিচিত। ঢাকায় চলে যাওয়ার পর

ডাবুয়া গ্রামের এলাকার গণি পাড়া গ্রামের গণি চৌধুরী বাড়ীতেই শাবানার জন্ম

আফরোজা সুলতানা (রত্না) পরিবতে শাবানা নামটি রাখা হয়। ছোট বেলায় তাঁর শৈশবের দিন গুলো রাউজানের ঐ গ্রামে খেলাধূলা পড়াশোনার মধ্যে সময় কেটেছিল প্রকৃতির সাথে। শাবানা গ্রামে তাঁকা অবস্থায় স্থানীয় রামসেবক প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হয় ডাবুয়া তারাচরন শ্যামাচরন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা চলা অবস্থায় পরবর্তীতে বাবার চাকরির সুবাদে তাঁকে ঢাকার গেন্ডারিয়ার মনিরা রহমান গার্লস হাই স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে ভর্তি হন তিনি। তাঁরা ঢাকায় চলে যাওয়া পর কয়েক বার নিজের শৈশব কাটানো জন্মস্থানে আসা হলেও, নিজ গ্রামে এখন তাঁদের পদচারণা পড়ে না বললেই চলে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে বসবাস করছেন শাবানার পরিবার। মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতে দেখা গেলেও কিন্তু নিজের গ্রামের বাড়ি যেখানে তাঁর জন্ম রাউজানে এক যুগের বেশি সময় ধরে তাঁরা আসেনা। তাঁর নিজ গ্রামের মানুষরা প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখেন গ্রামের সবার প্রিয় রত্না হয়তো কোন একদিন সবাইকে দেখতে আসবেন। সরজমিন গিয়ে দেখা যাই, সাদা রঙের একটি অনেক বছর আগের পুরাতন বাড়ি। অনেক পুরানো ইটের তৈরি একটি টিনের ঘর। ঘরের দেয়াল-দরজা-ও লাগানো তালায় ঝং ধরে আছে যেন বহু বছর ধরে। শাবানার গ্রামের মানুষ’রা জানান গত ১৪/১৫ বছর আগে শাবানা গ্রামে এসেছিলেন, তাঁর পর আর সেই গ্রামে তাঁর পদচারণা পড়েনি। গ্রামের লোকজন আরও জানান, শাবানা গ্রামের বাড়িতে না আসলেও ২০১০/১১ সালের দিকে শেষ একবার শাবানার মা ফজিলাতুন্নেসা এই বাড়িটিতে আসেন সেই সময়ে শাবানার ভাই-বোন রিপন, শাহীন, রিজভি ও রনজিনাকে নিয়ে গ্রামে আসেন। এরপর তারাও আর এই গ্রামের বাড়িতে আসেনি। শাবানাদের বাড়ি সাথে লাগানো তাঁদের চাচার বাড়ি। একটি পাকা ঘর, তারও সেই গ্রামে থাকেনা, তারা চট্টগ্রাম শহরে থাকেন, তবে তাঁরা সুযোগ পেলে চলে আসেন গ্রামের বাড়িতে। এছাড়াও রাউজানের মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছ, রাউজানের ঐতিহ্য বাহী ঘটনার (মালকা বানু) ইতিহাস নিয়ে জনপ্রিয় ছবি মলকা বানু’র শুটিং করেছিলেন শাবানা রাউজানের কয়েকটি এলাকায়। শাবানার চলচ্চিত্রে ইতিহাস টেনে জানা যায়, ১৯৬৭ সালে (চকোরী) চলচ্চিত্রে নাদিমের বিপরীতে নায়িকা হয় শাবানা, ছবির পরিচালক ছিলেন এহতেশাম। পরে একে একে ৩০০ টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তবে জুটি হিসেব নায়ক আলমগীর-শাবানা জুটি ছিল বাংলাদেশের সিনেমা জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয়। সেই সঙ্গে এই জুটির রেকর্ড গড়েন শাবানা। নায়ক রাজ্জাক, ওয়াসিমসহ এদের সাথে অসংখ্য ছবিতে তাঁর অভিনয় ছিল দেখার মতো।
পরে ১৯৯০ কাছাকাছি সময়ে তিনি বেশির ভাগ ছবিতে ভাবি বা মায়ের অভিনয়ে করতেন। সেখানেও তাঁর অভিনয় দর্শকের জনপ্রিয়তা পাই। ২০০০ সালে
হঠাৎ রূপালী জগৎ থেকে তিনি আড়ালে চলে যান। আর কোন ছবিতে তাঁকে তেমন একটা দেখা যাইনি।
ষাট দশকের শেষ থেকে নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন শাবানার অভিনয়। এই রাউজানের ডাবুয়া গ্রামে বেড়ে ওঠা সেই গ্রামের বাড়ির মানুষ’রা প্রতিনিয়ত শাবানার কথা বলেন হয়তো আবারও তার পদচারণা মুখরিত হবে গ্রামের পরিবেশ। শাবানার বয়স হলেও গ্রামের মানুষের মাঝে শাবানা তাঁদের সেই ছোটবেলার আফরোজা সুলাতানা রত্না হিসেবে আছেন। হয়তো কোন একদিন রাউজানের নিজ বাড়িতে আসবেন সাদা রঙের টিনের বাড়ি ও ঝং ধরা তালার আগমন ঘটবে। শাবানা অভিনয়ের জন্য এগারো বার ও প্রযোজক হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালে পান চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা।