ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সোমবার রাতে নামল স্বস্তির বৃষ্টি। এতে গত কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমের অবসান ঘটেছে। স্বস্তি নেমে এসেছে শহরজুড়ে। তবে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হতে দেখা গেছে। সঙ্গে ছাতা না থাকায় অফিসফেরত মানুষ ভিজে বাসায় ফেরেন। রিকশাভ্যানে সবজি, ফলমূল, কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্য ফেরি করা নিম্নআয়ের মানুষ এসময় দুর্ভোগে পড়েন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। বঙ্গেপসাগরে থাকা ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২৪ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এই গরম থেকে সোমবারই স্বস্তি মিলতে পারে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া ইয়াসের প্রভাবে দাবদাহের প্রভাব কমতে শুরু করবে। বৃষ্টির আভাস রয়েছে।
এদিকে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক-৭) বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা থেকে ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
দেশের সব সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়া হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানলে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, সাইক্লোন প্রিপার্ডনেস অ্যানড্ ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী বন্দর কর্তৃপক্ষ আবহাওয়া অধিদফতরের সংকেত বাড়লে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
সোমবার গুগলের পূর্বাভাসে দেখা যায়, বিকাল সাড়ে পাঁচ টার দিকে ঢাকায় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি হলেও অনুভূত হচ্ছে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাইতে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে ৩৬ ডিগ্রি হলেও অনুভূত হচ্ছে ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুই দেশের তাপমাত্রা একই দেখাচ্ছে।
তবে বৃষ্টির কারণে সারা দেশে তাপমাত্রা কমেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৬ মে বিকাল বা সন্ধ্যায় আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সেসময় পূর্ণিমা থাকায় জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের গতিমুখ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার দিকে। তবে কোনো কারণে এর গতিপথ পাল্টে গেলে এটি উপকূলে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ইয়াস যে পথে এগোচ্ছে, তাতে এই ঝড় অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ভারতের ওড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকার মাঝামাঝিতে আঘাত হানবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ছয় ঘণ্টায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটার বেগে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়েছে। এটা আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ১২ ঘণ্টায় শক্তি সঞ্চয় করে ইয়াস প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। পরের ২৪ ঘণ্টায় আরও শক্তি নিয়ে হয়ে উঠবে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়।
ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগিয়ে বুধবার সকাল নাগাদ ওড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছাবে। ওই দিন দুপুর নাগাদ ওড়িষ্যার পারাদ্বীপ এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যে ওড়িষ্যার বালাসোরের কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।