হাটহাজারী প্রতিনিধি: হাটহাজারী- ফটিকছড়ি মহাসড়কের সদরস্থ বাসস্টেশন থেকে ফকির মসজিদ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের মধ্যে রাস্তার মাঝখানে শতাধিক বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই সড়ক প্রশস্ত ও পাকা করার কাজ চলছে।রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য রাস্তার দুই পাশে কয়েকহাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তবে রয়ে গেছে রাস্তার মাঝে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো।সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিদ্যুৎ বিভাগের অনুকূলে টাকা জমা দেওয়া হয়নি। ফলে বিদ্যুৎ বিভাগ খুঁটিও অপসারণ করেনি। এরপরও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সড়কের মাঝখানে খুঁটি রেখেই পাকা করার কাজ করছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে যানবাহনের চালক ও স্থানীয়রা।সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামের হাটহাজারী – ফটিকছড়ি – রাউজান পর্যন্ত যানজটের চাপ কমাতে ও যাতায়াতের সুবিধার্থে আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রায় ৩২ কিলোমিটারের উভয়পাশে প্রশস্তকরণ ও পাকা করার কাজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। প্রশস্ত ও পাকাকরণের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার MAX infrastructure package-1 এবং RAB RC package-2 নামে দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে।রাস্তা প্রশস্ত করার ফলে হাটহাজারী সদরস্থ বাসস্টেশন থেকে ফকির মসজিদ পর্যন্ত ১১ হাজার ভোল্টেজ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের প্রায় ১২০টি বৈদ্যুতিক খুঁটি রাস্তার মধ্যে পড়েছে। খুঁটি অপসারণ ও প্রতিস্থাপন করতে সওজকে ১৬ লাখ টাকার ডিমান্ড নোট দিয়েছে পিডিবির এর হাটহাজারী জোনাল অফিস।সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(পিডিবি) হাটহাজারী শাখার এর অনুকূলে ১৬ লাখ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত খুঁটিগুলো অপসারণ করছে না পিডিবি।এদিকে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার রাস্তার মধ্যে খুঁটি রেখেই পাকা করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। একদিকে পাকা করার কাজ, অন্যদিকে যানবাহনও চলাচল করছে পাল্লা দিয়ে। এতে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে অনাঙ্খিত দুর্ঘটনা। জরুরি ভিত্তিতে খুঁটিগুলো অপসারণ করা না হলে যেকোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালকসহ স্থানীয়রা।স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ নাছের বিন আমিন সায়মন, হেলাল মাসুদ মজুমদার, আবু হায়াত মানিক,হাবিবসহ অনেকেই বলেন, রাস্তার মাঝে খুটি রেখে রাস্তা পাকা করার কাজ চলছে। এটা যুক্তিযুক্ত নয়।এতে যে কোন সময়ে খুটির কারণে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই অতি দ্রুত এই খুটিগুলো অপসারণ করা দরকার। সকাল থেকেই হাজারো মানুষ, স্কুল , কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। এতে সমস্যার সৃষ্টি পূর্বেই সমাধান প্রয়োজন।একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, মাঝে মাঝে গাড়িতে যাতায়াত করার সময় বিদ্যুতের খুটির কারণে দূর্ঘটনার মুখোমুখি হয়ে পড়ি, দুটি গাড়ি সাইড নিতে পারে না। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুতের এই খুটি সরানো খুবই জরুরি।সিএনজি চালক আবু, ইকবাল, সাদ্দাম, বাসচালক রমজানসহ অনেকে জানান, রাস্তার মধ্যে থাকা বৈদ্যুতিক খুটি জরুরিভাবে অপসারণ করা না হলে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। শুধু তা নয়, ঠিকাদার ও সওজের গাফিলতির কারণে সড়কের কাজ নির্ধারিত সময়ে করতে পারছে না। তারা বার বার সময় বাড়ার কারণে এখন ৩ বছর হয়ে যাচ্ছে। তারপরও সড়কের কাজ শেষ হচ্ছে না। সড়কের কাজ দীর্ঘ সময় পার করার কারণে উত্তর হাটহাজারী ফটিকছড়ির কয়েক হাজার সিএনজিসহ নানা ধরনের গাড়ির যে পরিমাণের নষ্ট হয়েছে তা কেবল গাড়ির মালিক ও চালকরা বলতে পারে।ঠিকাদার MAX infrastructure package-1 এর প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। এরপরে RAB RC package-2 নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার নুরুজ্জামানের সাথে মুঠফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু বিদ্যুতের খুটির জন্য ভালভাবে কাজ করতে পারছিনা। শুধু আমরা কাজ করতে পারছি না তা নয়, সড়কে যে পরিমাণের গাড়ি চলে তাতে যে কোন মুহুত্তে ঘটতে পারে মৃত্যুরমত বড় দুর্ঘটনা। এরপর কাজের মেয়াদ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বাড়তি সময়ের জন্য সব রকমের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এরপর তিনি ব্যস্ত দেখিয়ে বিদায় নেন।হাটহাজারী সওজের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো: সাজ্জাদ হোসেন সৌরভ বলেন, কাজ চলছে পুরোদমে। পাশাপাশি বিদ্যুতের খুটি অপসারণ ও প্রতিস্থাপনের কাজও শুরু হবে। এ প্রকল্পের ব্যয় ৫১৬ কোটি টাকার উপরে হবে। এরপর মহাসড়কের দুপাশে কত হাজার গাছ ছিল তা জানতে চাইলে তিনি জানেন না এবং সেটার জন্য আলাদা বিভাগ আছে বলে তিনি জানান।হাটহাজারী পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী নওয়াজ আহমেদ খান বলেন, আমাদের চাহিদা প্রাক্কলন ব্যয় পরিশোধ করা হয়েছে। তার সাথে সাথে আমরা অনেক গুলোপুল প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তারমধ্যে রমজান মাস চলে আসে। এ সময় লোডশেডিং না করার নির্দেশনা রয়েছে। তার জন্য করা হয়নি। আশা করছি আগামী সপ্তাহে থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(বিপিডিবি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানু বলেন, খুঁটি অপসারণ ও প্রতিস্থাপনের ব্যয়ের টাকা সমুহ কিছুদিন আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পিডিবি এর অনুকূলে জমা দেওয়া হয়েছে। তারপর সেখানে অনেকগুলো পুল প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আশাকরছি খুব শীঘ্রই সড়ক থেকে খুঁটিগলো অপসারণ করা হবে এবং কাজ চলমান রয়েছে। আসলে বিদ্যুতের খুটি রাস্তার সাথে করে স্থাপন করা হয়। সওজ যখন তখন সড়ক প্রশস্তের কাজ করে। চাইলে তো সাথে সাথে খুঁটি অপসারণ আর প্রতিস্থাপন করা যায় না। একটু সময় লাগে। তারমধ্যে লকডাউনে শ্রমিক কিংবা ঠিকাদার পেতে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, হাটহাজারী – ফটিকছড়ি মহাসড়কের প্রায় ৩২ কিলোমিটার প্রশস্তকরণের কাজ পুরোদমে চলছে। দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ কাজ গুলো করছে।এছাড়াও সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ ও প্রতিস্থাপন করতে ব্যয়ের চাহিদাপত্র দিয়েছে পিডিবি। তাদের দেওয়া চাহিদা প্রাক্কলন ব্যয় পরিশোধ করা হয়েছে।এখন সড়কের দুপাশে খুঁটি রয়েছে তা সড়াতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও পর্যন্ত রাস্তা থেকে খুঁটিও অপসারণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।