নগরের জুবিলী রোড এলাকার মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে চুরির চেষ্টা এবং একই ভবনে বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্স নামক অফিসের ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশা ও নগদ ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (২২ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) দক্ষিণ বিভাগের অফিসে সংবাদ সম্মেলনে উপ-কমিশনার বিজয় বসাক এসব তথ্য দেন।
উপ-কমিশনার বিজয় বসাক বলেন, শুক্রবার (২১ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোতোয়ালী থানাধীন পুরাতন রেলস্টেশনস্থ গাউছিয়া সাইকেল মার্টের বিপরীত পাশে গ্রামীণ মাঠের প্রবেশমুখে রাস্তার চুরির ঘটনায় জড়িত সিএনজি অটোরিকশা ড্রাইভার মাহফুজকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে নগদ ৫ হাজার টাকা ও ২টি চাপাতি জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, গ্রেফতার অটোরিকশা ড্রাইভার মাহফুজের তথ্যমতে শনিবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে আকবরশাহ থানাধীন বিশ্বকলোনি কাঁচাবাজার টাংকি পাহাড় এলাকা থেকে মো.মনির হোসেন ও খুকি বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। খুকি বেগমের হেফাজতে থাকা চোরাইকৃত টাকা বসতঘরের রুমে সানসিটের ওপরে পাওয়া যায়। এসময় একটি প্লাস্টিকের ব্যাগভর্তি চোরাইকৃত ২৭ লাখ টাকা ও চোরাইকাজে ব্যবহৃত ১টি রেঞ্জ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- টাংকি পাহাড় শান্তিনগর জি-ব্লক এর মৃত মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে মো.মনির হোসেন ও তার স্ত্রী খুকু মনি প্রকাশ খুকি বেগম (২৮), চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার চাঁনপাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ড আনাজি বাড়ির মো. আজিজের ছেলে মো. মাহফুজ।
গত বুধবার সকাল ১১টার দিকে জুবলী রোড মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক শাখার ভিতরে প্রবেশ করে কর্মকর্তারা দেখেন, ব্যাংকের দক্ষিণ পাশে জানালার লোহার গ্রীল কাটা। ব্যাংকের মধ্যে চোর ঢুকলেও কোনও মালামাল বা টাকা-পয়সা নিয়ে যায়নি। একই ভবনের ৪র্থ তলার বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্স অফিসের ভিতরে অফিসের ২টি জানালার গ্রীল কাটা এবং অফিস কক্ষের ভিতর রক্ষিত লোহার সিন্ধুক ও আলমারির ড্রয়ার খোলা অবস্থায় পড়েছিল। সিন্ধুকের ড্রয়ারের ভিতর রক্ষিত যাবতীয় মূল্যবান জিনিসপত্র সহ কাগজপত্র মেঝেতে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় এবং ড্রয়ারে রক্ষিত ব্যবসার নগদ ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুরি হয়ে যায়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা হতে ভোর ৬টার মধ্যবর্তী সময়ে এই চুরি সংঘটিত হয় বলে জানায় পুলিশ।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, গ্রেফতার মো.মনির হোসেন একজন পেশাদার চোর। তিনি দীর্ঘ ৭ বছর ধরে চুরি পেশায় জড়িত। এসময়ে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি চুরি করেছেন। চুরি পেশার পাশাপাশি বিশ্বকলোনি শাপলা গ্যাসলাইন এলাকায় তার একটি ভাঙ্গারির দোকান আছে। চোরাইকৃত মালামালগুলো সে দোকানে রেখে বিক্রয় করেন। প্রতিদিন রাত সাড়ে ১১টায় চুরি করার উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিগত সিএনজি ড্রাইভার মাহফুজকে নিয়ে বের হয়।
তিনি বলেন, যেখানে অন্ধকার পরিবেশ দেখে সে এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা থামিয়ে বিভিন্ন অফিসের পিছনের রাস্তা দিয়ে পাইপ বেয়ে ওপরে উঠে জানালার গ্রীল কেটে ভিতরে ঢুকে চুরি করে। চুরি শেষে মনির হোসেন অটোরিকশা চালক মাহফুজকে চোরাই টাকার ভাগ দিয়ে দেয়। ২৭ লাখ ৫০ হাজার থেকে সিএনজি চালক মাহফুজকে ১০ হাজার টাকা ভাগ দেন।
তিনি আরও জানান, আন্তঃজেলা চোর আমির মো. মনির হোসেন তার আপন বড় ভাই। আমির গত ফেব্রুয়ারি মাসে মৃত্যুবরণ করেছে। গত বৃহস্পতিবার চুরির টাকা দিয়ে বড়ভাই আমিরের জিয়াফতের আয়োজন করেছিল মো.মনির হোসেন। তাদের কাছ থেকে একটি ব্যাংকের চেক বই উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় ২টি মামলা করা হয়েছে। আদালতে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। ব্যাংকেরে মাধ্যমে চুরির টাকা লেনদেন হলে আরেকটি মানিলন্ডারিং মামলা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কোতোয়ালি জোনের এসি মো.মুজাহিদুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কবির হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো.জাবেদ উল ইসলাম, উপপরিদর্শক এসআই মো.মোমিনুল হাসান, এসআই সুকান্ত চৌধুরী, এসআই মোহাম্মদ আইয়ুব উদ্দিন, এসআই মৃণাল কান্তি মজুমদার, এসআই মো. রবিউল ইসলাম, এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস, এএসআই সাইফুল আলম প্রমুখ।