প্রীতি ও প্রেমের দোল

কোথাও রঙিন স্মৃতিকে ঝালিয়ে নেওয়ার পালা, তো কোথাও নতুন রঙে কাউকে রাঙিয়ে নেওয়ার আবেগ। কোথাও বা জীবনের সব রঙের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নেওয়ার লড়াই আবার কেউ বা মশগুল বসন্তের রঙে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে। এভাবেই এদিন সকাল থেকে বসন্তের সান্নিধ্যে দোল উৎসব উদযাপনে ব্যস্ত নগরী।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দোলযাত্রা; সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। এটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামেও পরিচিত। দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত এ উৎসবে ভক্তরা সৃষ্টিকর্তার কাছে ন্যায়ের বিজয় ও অন্যায়ের বিনাশ প্রার্থনা করেন।

দোলযাত্রা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সারাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। এর মধ্যে আছে, পূজা, হোমযজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণ প্রভৃতি। মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি দোল উৎসবের অনুষ্ঠানমালায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে পূজা, আবির খেলা ও কীর্ত্তন এবং দুপুরে প্রসাদ বিতরণের আয়োজন করেছে। ভক্তরা প্রাণরসে উপভোগ করবে সেসব আয়োজন।

সকাল থেকে তার সাজ সাজ রবও শোনা গেছে। যেন অনেকের ঘুম ভেঙেছে হৃদয়ে দোল আয়োজনের দোলা লেগে। আবিরের রঙে রঙিন হওয়ার এ উৎসবে মাতবেন শিশু থেকে সবাই।

তেমনটাই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিবেদিতা বকশী। তার মতে, রং খেলা মানুষের মিলনোৎসব। আমরা একে অন্যকে রঙে রঙিন করে এই বার্তাটাই তো দিতে চাই যে, এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। বসন্তের এই শ্রেষ্ঠ উৎসবে নিমন্ত্রণ আমাদের সবারই। শরতের শ্রেষ্ঠ উৎসব যেমন দুর্গাপুজো, তেমনই বসন্তের বর্ণিল উৎসব দোলযাত্রা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজারসহ নগরীর হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আগে থাকতেই শুরু হয়েছে রঙের রকমারি। দোকানে দোকানে শুরু হয়েছে নানান রঙের রং-ও। সকালে প্রথমে আরতির পর রাধাকৃষ্ণ পূজা আর আবির খেলা। তাতে মাতবে সবাই। আর মূল রং খেলা অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার।

দোল উৎসবের আলাদা মর্ম ও মাহাত্ম্য যোগ করেছেন বৈষ্ণব অনুসারীরা। একে হোলি নামেও অভিহিত করা হয়। তবে বলা হয়, আদিতে দোল ও হোলি ছিল আলাদা। বর্তমানে দু’টি উৎসব একীভূত হয়েছে। এই উৎসবের অপর নাম বসন্ত উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোল পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্য গোপীদের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি।

আর পণ্ডিতদের মতে, রাধাকৃষ্ণের দোলনায় দোলা বা দোলায় গমন করা থেকেই ‘দোল’ কথাটির উৎপত্তি। বাঙালির দোল বৈষ্ণব ধর্মাশ্রিত একটি উৎসব হলেও রবীন্দ্রনাথ দোলযাত্রার ধর্মীয় অংশকে বাদ দিয়ে তার সাংস্কৃতিক দিকটিকে নিয়ে একে ‘বসন্ত উৎসব’-এ রূপান্তরিত করেন। খানিকটা সেই সূত্র ধরেই দোল প্রীতির উৎসব, প্রেমের উৎসব।

এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বিবৃতিতে দোল পূর্ণিমা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়সহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।