ভবন-রাস্তা নির্মাণে বাঁধের ব্যয় কমাবে চুন ও নাইলন সুতার মিশ্রণ

সাদার্ন ইউনিভার্সিটিতে পুরকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ‘মাটির সঙ্গে চুন ও নাইলন সুতা মিশ্রণ করে মাটির চাপশক্তি বৃদ্ধি’ শীর্ষক সেমিনার সম্প্রতি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়।

পুরকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ড. হাসিনা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিভাগের শিক্ষিকা প্রকৌশলী সামিরা জাহান।

সেমিনারে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রবন্ধে সামিরা জাহান মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধি সম্পর্কে আনুমানিক ধারণা, সংশ্লিষ্ট গবেষণা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বড় বড় শহরগুলোতে নির্মাণ শিল্পের প্রতিযোগিতার পেছনে অন্যতম কারণ হলো দ্রুত নগরায়ন। নির্মাণাধীন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পগুলো যেমন- সড়ক, মহাসড়ক, সেতু এবং উঁচু ভবন এখন বাংলাদেশের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিণত হয়েছে। যেকোনো কাঠামোর ভিত্তি মাটির ওপর নির্মিত হয়। ভিত্তির নিচে নরম মাটির উপস্থিতি কাঠামো দেবে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে এবং তা ঝুঁকিপূর্ণ। মাটির অসম বসন অথবা অতিরিক্ত বসনের জন্য অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমানো যায় মাটির ভারবহন ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে।

সামিরা জাহান গবেষণায় উল্লেখ করেন, মাটির সঙ্গে বিভিন্ন অনুপাতে চুন ও নাইলন সুতা মিশ্রণ করে মাটির চাপশক্তি পর্যবেক্ষণ করা হয়। যেখানে মাটির ওজনের সঙ্গে চুনের বিভিন্ন অনুপাত যেমন- ০%, ২%, ৪%, ৬%, ৮%, ১০%, ১২%, ১৪% এবং ১৬%) এবং চুনের ওজনের সাথে ২% নাইলন সুতা ব্যবহার করা হয়।

গবেষণায় ২টি মাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে একটি সংগ্রহ করা হয় চট্টগ্রামের কদলপুর, রাউজান থেকে এবং অন্যটি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থানার আকবরশাহ এলাকার একটি পাহাড় থেকে। নমুনা ২টির ইনডেক্স প্রপার্টি এবং আনকনফাইন্ড কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ পরিমাপ করা হয় যথাক্রমে ৭ দিন, ১৪ দিন এবং ২৮ দিন কিউরিং সময়ের জন্য।

গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ধান চাষের জমির মাটিতে ১০% চুন মিশ্রণ এবং পাহাড়ি মাটিতে ৮% চুন মিশ্রণ করে সর্বাধিক আনকনফাইন্ড কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ পাওয়া যায়, যা মাটির সঙ্গে চুন ও নাইলন ব্যবহার করা ছাড়া মাটির আনকনফাইন্ড কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ এর চেয়ে ৪ থেকে ৬ গুণ বেশি।

গবেষণায় এটিও দেখা যায়, কিউরিং এর সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মাটির আনকনফাইন্ড কম্প্রেসিভ স্ট্রেন্থ বৃদ্ধি পায় এবং সর্বোচ্চ শক্তি ২৮ দিন কিউরিং এ পাওয়া যায়।

গবেষণায় দেখা যায়, সাবগ্রেডের মাটির শক্তি বৃদ্ধি করে আবাসিক/বাণিজ্যিক ভবনের ভিত্তির ব্যয় এবং রাস্তা নির্মাণে বাঁধের ব্যয় হ্রাস করতে চুন ও নাইলন সুতা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। গবেষণায় এটি প্রতীয়মান হয় যে, বিল্ডিং ফাউন্ডেশন অথবা রাস্তার সাবগ্রেড নির্মাণে বাইন্ডার হিসেবে চুনের ব্যবহার বাড়াতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।