ইয়েমেনের বন্দিদশা থেকে বাড়ি ফিরলেন রাউজানের তৈয়বসহ পাঁচ বাংলাদেশি

শফিউল আলম, রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃইয়েমেনে হুজি বিদ্রোহীদের হাতে বন্দীদশা থেকে দীর্ঘ ১১মাস পর দেশে ফিরেছেন রাউজানের অবু তৈয়বসহ পাঁচ বাংলাদেশী।

১০ জানুয়ারী রবিবার সকাল সাড়ে ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে তারা দেশে ফেরেন। ঢাকা বিমান বন্দর থেকে বিকেল সাড়ে ৫টায় বাড়িতে ফিরেন রাউজানের আবু তৈয়ব। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার সহায়তায় তাদের জরুরি সহায়তা দেয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। জানা যায়, ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চাকরির সুবাধে বৈধ ভিসাযোগে সমুদ্রপথে সৌদি আরব যাচ্ছিলেন কোম্পানির অধীনে কাজ করতে। এর মধ্যে ইয়েমেন উপকূলে প্রচন্ড ঝড়ের কবলে আটকে পড়ে জাহাজটি। সেই থেকে প্রায় ১১ মাস ধরে ইয়েমেনে বন্দি ছিলেন তারা। এই পাঁচজনের মধ্যে মো. আবু তৈয়বের বাড়ি রাউজান উপজেলায়। তিনি চিকদাইর ইউনিয়নের দক্ষিণ সর্তা গ্রামের কাদের বক্সের ছেলে । অন্যদের বাড়ি মিরসরাই। তারা হলেনÑ দারোগা হাটের বামণসুন্দর গ্রামের মো. আলমগীর, মাদবরহাট এলাকার মো. আলাউদ্দিন, ভরদ্বাজহাট এলাকার পূর্বদুর্গাপুর গ্রামের মো. ইউসূফ ও মো. রহিম উদ্দিন। তাদের প্রত্যেকের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান জানান, গত ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ওমান থেকে সৌদি আরবে যাচ্ছিল তিনটি জাহাজ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে একটি জাহাজ ইয়েমেন সাগরে ডুবে যায়। বাকি ২টি জাহাজের মাধ্যমে প্রাণে রক্ষা পেয়ে তারা ইয়েমেনের বন্দরে নেমে আশ্রয় প্রার্থনা করলে হুজিরা তাদের আটক করে। পরে দেশে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যরা জুনে তাদের উদ্ধারের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করে। পরে আটক বাংলাদেশিরা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তারা বিষয়টি কুয়েত, ওমান ও জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেয়। এই পাঁচ বাংলাদেশিদের সঙ্গে ভারতীয় ১৪ জন নাবিক ও বন্দি ছিলেন। ভারত সরকারও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। ২৮ নভেম্বর হুজি বন্দিরা তাদের মুক্তি দিলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওওম) হেফাজতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শনিবার তাদের ঢাকা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফিরে আসা রাউজানের আবু তৈয়ব জানান, পরিবারে সচ্চলতা ফেরানোর জন্য ১৯৯৬ সালে বৈধভাবে সুলতান অ্যান্ড সুলতান মুহাম্মদ কোম্পানির অধীনে ওমানে পাড়ি জমান আবু তৈয়ব। সবকিছু ভালোই চলছিল। ২০১৭ সালে ২১ আগস্ট দেশে এসে এক মাস অবস্থান করে পুনরায় চলে যান। চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি চাকরির সুবাধে কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় ভিসাযুক্ত পাসপোর্টসহ ৩টি জাহাজে করে অনেকের সঙ্গে এই পাঁচজনও সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা দেন। সৌদি সমীন্তবর্তী ইয়েমেনে পৌঁছলে ঝড়ের কবলে পড়ে ডানা-৬ নামে জাহাজটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া জাহাজে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করে অন্য জাহাজে তোলা হয়। এর পর জাহাজটি ইয়েমেনে নোঙর করে। তখন সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জাহাজের সবাইকে আটক করে নিয়ে যান। ১১ মাস পরে হলেও দেশে ফিরে মা ও সন্তানকে দেখে আনন্দে অশ্রু ঝড়ছে। আমি মনে করেছি সেদেশে মৃত্যুবরণ করতে হবে। প্রাবাসী আবু তৈয়বের মা রাবেয় খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে ফিরে পাব সেটা কল্পনাও করিনি। মৃত্যুর আগে ছেলের মুখটা দেখলাম এর চাইতে শান্তির আর কিছুই নেই। আবু তৈয়ব রাউজান উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়নস্থ গ্রামের বাড়িতে ফিরলে মা ও সন্তানদের জড়িয়ে ধরে আনন্দে অশ্রুসিক্ত হন। ইয়েমেন থেকে বন্দীদশা থেকে ফিরে আসা আবু তৈয়ব রাউজান উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়েনের দক্ষিণ সর্তা গ্রামের কাদের বক্সের ছেলে।