২০২০ সাল নাগাদ শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং দীর্ঘসময় ধরে দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকার কারণে প্রায় ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার, বিকলাঙ্গতা, শ্বাসযন্ত্রের দুর্বলতাজনিত কারণে মৃত্যু, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার, ডায়াবেটিস সহ নিউমোনিয়ার মতো রোগের কারণও বায়ু দূষণ। গত পাঁচ বছরে (২০১৫-২০১৯) সার্বিকভাবে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ গুণ বেড়ে ৩ হাজার ৩২৬ জন (২০১৫) থেকে ৭৮ হাজার ৮০৬ জনে (২০১৯) দাঁড়িয়েছে। যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে ৫৬ জন থেকে ৫৮৮ জনে উপনীত হয়েছে। গতকাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডো একটি ভার্চ্যুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। ‘বাংলাদেশে বায়ু দূষণ: অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত উৎস’ আলোচিত হয় এতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণ শুধু স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নয়, এটি অর্থনৈতিক এবং ইকোসিস্টেমের ঝুঁকিরও কারণ। এই গবেষণায় প্রতীয়মান হয়, বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধ করা সম্ভব।
এই গবেষণাটি করা হয়েছে বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন দেশের বায়ুদূষণের তুলনামূলক মূল্যায়নের মাধ্যমে বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের দিকসমূহ চিহ্নিত করা। বায়ুদূষণ শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ নয়, পরিবেশ ও অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এসডো’র সাম্প্রতিক এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী বিগত ১১ মাসের বায়ুমান সূচকে বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক দূষণের মাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় এবং ঢাকা নগরী চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
এই গবেষণায় শহর এবং গ্রামীণ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক বায়ুদূষণের দিকসমূহ আলোচনা করা হয়েছে। বাহ্যিক বায়ুদূষণের কারণ হলো, নির্মাণ কার্যক্রম (৩৮%), প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো (২২%), শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ (১৭%), ইটভাটা (১০%), জীবাশ্ম জ্বালানি দহন, সড়ক পরিবহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮%। তাছাড়াও অভ্যন্তরীণ কারণগুলো হলো রান্নার চুলা থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া ৪১%, সিগারেট থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া ২৫%, নর্দমা নিষ্কাশন ১৫%, রেডন গ্যাস ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ ১০%। এসডো’র পর্যালোচনায় জানা যায়, মৌসুম পরিবর্তন ও বাতাসের আন্তঃসীমান্ত গতিশীলতা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। এটি বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের সীমান্ত দ্বারা বেষ্টিত। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতজুড়ে দক্ষিণ এশিয়া হতে দূষিত বায়ু ঢাকাতে পরিবাহিত হয়। শীতকালে (নভেম্বর-জানুয়ারি) উত্তর-পশ্চিম বায়ুর প্রভাবে দূষিত পার্টিকুলেট ম্যাটারের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু বর্ষাকালের আগে বাতাসে দূষিত বায়ুর প্রভাব থাকে মিশ্র (ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল)। উচ্চতার প্রভাবে বাতাসে দূষিত কণা প্রতি কিলোমিটারে ২০০ থেকে ৫০০ কি.মি প্রবাহিত হতে পারে। শীতকালে আন্তঃসীমান্ত গতিশীলতার বাতাসে দূষিত বায়ুকণার প্রভাব সর্বোচ্চ থাকে যা বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান বেল্টের কারণে উত্তরদিকে প্রবাহিত হয়ে ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছায়।
গত পাঁচ বছরে (২০১৫-২০১৯) সার্বিকভাবে হাঁপানি রোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ গুণ বেড়ে ৩ হাজার ৩২৬ জন (২০১৫) থেকে ৭৮ হাজার ৮০৬ জনে (২০১৯) দাঁড়িয়েছে। যেখানে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে ৫৬ জন থেকে ৫৮৮ জনে উপনীত হয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসজনিত রোগীর সংখ্যা ২০১৫ সালে ১৬১০ জন থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৭৮ হাজার ৮০৬ জনে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় ৪৯ গুণ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্যমতে, এই সময়ে মৃত্যু সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবু জাফর মাহমুদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট শাখা) ড. মো. আবদুল মোতালিব, নিপসমের পেশাগত ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাফিউর রহমান, এসডো’র মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন, এসডো’র নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানাসহ এসডো’র অন্য সদস্যরা।











