কতভাগ বাংলাদেশির টিকা পাওয়া নিশ্চিত?

লঞ্চ অ্যান্ড স্কেল ফাস্টারের তথ্য ৯ শতাংশ

দুনিয়াকে কাঁপাচ্ছে করোনা। এখন এর থেকে মুক্তি চায় বিশ্ব। তাই ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় মানুষ। বৃটেনে এরই মধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। অন্য উন্নত দেশগুলোতেও শুরু হচ্ছে সহসাই। সেখানে উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলো কবে নাগাদ ভ্যাকসিন পাবে- তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এখন করোনা ভ্যাকসিন বাজারে এলে বাংলাদেশে ৯ শতাংশ মানুষ তা পেতে পারেন। এমনই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিক্তিক লঞ্চ অ্যান্ড স্কেল ফাস্টার ওয়েবসাইট।
জনপ্রতি ভ্যাকসিন প্রাপ্তির দেশের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে কানাডা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক মানবজমিনকে বলেন, ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেড় কোটি মানুষের জন্য নিশ্চিত হয়েছে। এটা মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ। আর ধীরে ধীর গ্যাভির মাধ্যমে প্রায় ৭ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। যা ২০২১ সালে মধ্যে আসবে বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ধনী দেশগুলো ভ্যাকসিন মজুত করছে। অথচ বাকি দেশগুলোর জন্যে যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা নেই। ভ্যাকসিন প্রাপ্তির দিক থেকে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।
কানাডা ৬০১ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। আরো ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি চলমান। কানাডার পরের অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ৪৪২ শতাংশ মানুষের জন্যে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আরো ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি চলছে। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্যের রয়েছে ৪১৯ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা। এরপর, অস্ট্রেলিয়া ২৬৭ শতাংশ মানুষের জন্যে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রয়েছে ২৪৬ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির রয়েছে ২২২ শতাংশ মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা। ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বিচারে ১১৭ শতাংশ মানুষের নিশ্চয়তা নিয়ে নিউজিল্যান্ড রয়েছে চিলির পরের অবস্থানে। কম সংখ্যক মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির তালিকায় বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে তুরস্ক ও কুয়েত। দেশ দু’টিতে ১২ শতাংশ করে মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর, ভ্যাকসিন প্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে কাজাখস্তান (১৩ শতাংশ), পেরু (১৫ শতাংশ), লেবানন (১৫ শতাংশ) ও ভেনেজুয়েলার (১৮ শতাংশ)।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষার বরাত দিয়ে এনডিটিভি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ১৬০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন অগ্রিম কেনার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু, এই সংখ্যক ডোজ দিয়ে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এই দেশটির ৫৯ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে। বেশি আয়ের দেশগুলো যতটা সম্ভব বেশি পরিমাণে ভ্যাকসিন কিনে রাখছে যাতে সে সব দেশের সব মানুষকে প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিকবার ভ্যাকসিন দেয়া যায়। অথচ, উন্নয়নশীল ও গরিব দেশের মানুষের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন নেই। ভ্যাকসিন ডোজের সংখ্যার দিক থেকে ভারতের পরে রয়েছে ইইউ’র অবস্থান। সেখানে অন্তত ৬টি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১৩৬ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র কিনেছে ১১০ কোটি ডোজ। যুক্তরাষ্ট্রের পর বেশি সংখ্যক ডোজ কিনেছে ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স কোভ্যাক্স, কানাডা ও যুক্তরাজ্য। সমীক্ষা মতে, জনসংখ্যার বিবেচনায় কানাডা তার দেশের মোট জনগণের ৫ গুণের বেশি পরিমাণ ভ্যাকসিন কিনে রেখেছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকো ৮৪ শতাংশ, ব্রাজিল ৪৬ শতাংশ ও কাজাখস্তান ১৫ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে পারবে। সবচেয়ে কম ফিলিপাইন তার মোট জনসংখ্যার এক শতাংশকে ভ্যাকসিন দিতে পারবে বলে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি জি-২০ শীর্ষক সম্মেলনে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর করোনার টিকা প্রাপ্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বর্তমান ভ্যাকসিন দৌড় পরিস্থিতিতে সেটাই প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। একইসঙ্গে বিশ্বের ধনী দেশগুলোকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। দরিদ্র দেশগুলোর ভ্যাকসির পাওয়ার অগ্রগতি সামান্য বলেও তিনি মত দেন।