‘নব আঙ্গিকে নবযাত্রার’ থিয়েটার ইন্সটিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ৯ মাস পর টিআইসি সাংস্কৃতিক কর্ম-চাঞ্চল্যে ভরে উঠবে। এ দিন থেকে টিআইসি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
আজ সন্ধ্যায় থিয়েটার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে ফলক উন্মোচন করে এই টিআইসি’র উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, টিআইসি’র পরিচালক নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দারসহ বিপুল সংখ্যক সাংস্কৃতিক কর্মী। থিয়েটার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে মুক্তমঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন একটি উন্নত সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে পরিচয় বহন করে তার শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ। শিক্ষা সংস্কৃতির চর্চা ছাড়া কোন জাতি সভ্য ও উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচয় দিতে পারে না। সংস্কৃতি একটি জাতিকে সকল প্রকার অনাচার,অবিচার ও অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখে। এজন্য বর্তমান সরকার শিক্ষা ঢেলে সাজিয়েছে বিধায় শিক্ষার হার পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় সুস্থ ধারার সংস্কৃতি নাট্য চর্চার অবকাঠামো নির্র্মাণ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন তার থিয়েটার ইনস্টিটিউটকে নতুন ভাবে সাজিয়েছে। এতে ভারত সরকার এগিয়েছে, তৎজন্য তিনি চট্টগ্রামবাসী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ভারতের জনগণ, সরকার এবং ভারতীয় দূতাবাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক ও দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এখানে নাট্য ও সংস্কৃতি কর্মী আছে, নাট্য চর্চার জন্য কোন অবকাঠামো ও আধুনিক স্থাপনা ছিল না। এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন নাট্য চর্চা ও সংস্কৃতি কর্মীরা বেশি করে সংস্কৃতি চর্চা, কর্মকান্ড সম্পাদন করতে পারে,এ সুযোগ সৃষ্টির জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাজ করে যাচ্ছে । তিনি মুসলিম ইনস্টিটিউট নির্মাণের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান সরকার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে সংস্কৃতি বলয় নির্মাণ করতে যাচ্ছে। এ ইনস্টিটিউট নির্মিত হলে দেশের নাট্য ও সংস্কৃতি কর্মীরা উপকৃত হবে এবং দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। এতে প্রতিষ্ঠানটির কাজের পরিধি ও সম্প্রাসারিত হবে এবং সুস্থ ধারার নাট্য ও সংস্কৃতি চর্চাকে আরো গতিশীল করবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারতীয় হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি বলেন, ৭১ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় হয়। এই বন্ধন বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে উত্তরোত্তর আরো সৃনিবিড় হয়েছে। দু’দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহের পরস্পরা একই সূত্রে বহমান বলে তিনি উল্লেখ করেন। টিআইসি’র পরিচালক নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার বক্তব্য রাখেন।
ভারত সরকারের সহায়তা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়।এর মধ্যে ভারত সরকারের অর্থায়নে টিআইসি’র ভিতরে আধুনিকায়নে বিশেষ করে লিফট, মিলনায়তনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, শব্দ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানো, লাইটিংয়ের কাজের জন্য ভারত সরকার ২ কোটি ৩ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৬ টাকা অনুদান দিয়েছে। এ অর্থায়নে টিআইসি’র অডিটোরিয়াম সংস্কার, আধুনিক লিফট স্থাপন, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা, সর্বাধুনিক সাউন্ড সিস্টেম, ছাদে ফেইল সংযোজন, ফ্লোর কার্পেটিং, ভেতরে বাইরে রং করণ, মঞ্চ, ব্যাকস্টেজ, গ্যালারি সংস্কার, টয়লেট সংস্কার ও মেরামত, বহিরাঙ্গন-লোহার সিঁড়ি ও সিকিউরিটি সিস্টেম সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এ হলে আগে ৪২ টন এসি ছিল, বর্তমানে বাড়িয়ে ৮২ টন করা হয়েছে। মিলনায়তনে বসানো হচ্ছে নতুন চেয়ার। আগে মিলনায়তনের দুই পাশে চেয়ার, মাঝে দর্শকদের চলাচলের পথ ছিল, এখন চলাচলের পথ হবে দু’দিকে। এ ছাড়া থিয়েটার ইনস্টিটিউটকে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন মুক্তাঙ্গন গড়ে তোলার জন্য টিআইসি প্রাঙ্গণে মানুষের বসার ব্যবস্থা করার সঙ্গে সঙ্গে সৌন্দর্যবর্ধনে সবুজায়ন, এলইডি লাইটে আলোকায়নের ব্যবস্থা করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। উদ্বোধীন দিনে সমবেত গান, নৃত্য, নাটক ও আবৃতি পরিবেশিত হয়।