তৃতীয় কমান্ডার বাহিনীর সফল অপারেশন

এ যেন সিনেমার গল্পের নিখুঁত বাস্তবায়ন

আলীউর রহমান:: ২৮ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে নগরীর দামপাড়া ব্যাটারি গলির বাসা থেকে বের হয় গোলাম সরোয়ার। সে প্রায় রাতে বাড়ি যায় পরের দিন শহরে ফিরে আসে। হেঁটে আলমাস সিনেমার একটু আগে একটি মোটর সাইকেল দাড়িঁয়ে থাকতে দেখে হায়ারে নতুন ব্রিজ যাওয়ার জন্য চুক্তি করেন। মোটর সাইকেল কয়েকশত ফুর দূরে ভিআইপি টাওয়ারের কাছাকাছি যেতেই চালক গতি একটু কমিয়ে দেন।
মূহুর্তেই একজন লোক মোটরসাইকেলের পেছনে উঠে সরোয়ারের চোখে মুখে মলম জাতীয় কিছু লাগিয়ে দেয়। সেই সাথে কালো টুপি পরানো হয় তাকে। ফাঁসির কয়েদিকে পরানো টুপির মতো কালো টুপিতে ফিতে লাগানো ছিল। ফিতে টেনে শক্ত করে গিড দেয়ায় সরোয়ারের গলায় চাপ পড়ছিল। সে একটু নড়াচড়ার চেষ্টা করলে বুকের ডান পাজরের নিচে প্রচন্ড জোরো ঘুষির আঘাত করতে থাকে পেছনে বসা লম্বা শক্তিশালী মানুষটি। ঘুষির আঘাত করতে করতে লোকটি বলছিল, কথা বললে চিৎকার করলে মেরে ফেলব। মোটর সাইকেল কিছুদূর আসার পর তাঁকে একটি গাড়িতে তোলা হয়। গাড়ি চলতে থাকলে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন শুনতে পায় সরোয়ার। গাড়িতে তোলার কয়েক মিনিটের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে যায় সে।

কমান্ডো স্টাইলে পুরো ঘটনা কয়েক মিনিটে সংগঠিত হয়। সরোয়ারের জ্ঞান ফিরলে সে ফ্লোরে শুয়ে আছে বুঝতে পারে। শক্ত করে চোখ ও পা বাঁধা কিন্তু হাত খোলা। তার শরীরের টি শার্ট ও জিন্সের প্যান্ট তখনও ছিল। আশেপাশে চারজন লোক কথা বলছিল। তাদের একজন চট্টগ্রামের বাকিরা ঢাকার আঞ্চলিক টানে কথা বলছিল।
দুইজন ধরে সরোয়ারের পরনের প্যান্ট খুলে চাঁদরের মতো একটা কাপড় তার শরীরে জড়িয়ে দেয়। কানে তুলোর মতো কিছু গুজে দেয়া হয়। তারপর বুকের ছাতির সংযোগ স্থলে, হাঁটুর নিচে, দুই বাহুতে সমানে লাঠির আঘাত করতে থাকে তাকে। একটাই কথা আর নিউজ করবি কিনা বল।
কিছুক্ষণ পিটানোর পর থেমে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল তেনা ফাটা সাংবাদিক মেরে ফেলে দিলে কেউ খুঁজতেও আসবে না।
দীর্ঘক্ষণ পিটানোর পর বিরতি দিয়ে পানি আর একটি বনরুটি খেতে দেয়া হয়।
আঘাত সহ্য করতে না পেরে পশ্রাব করে দিয়েছিল সরোয়ার। সেই পশ্রাবের উপর তাকে ফেলে রাখা হয়।
অনেক্ষণ পর (সম্ভবত পরের দিন হবে। শক্ত করে চোখ বাঁধা থাকায় রাত দিন বুঝতে পারছিল না সে) আবারও একই স্টাইলে শরীরে কাপড় পেচিয়ে পিটানো হয়। ইচ্ছে মতো পিটানোর অনেকক্ষণ পরে আবারও পানি ও একটি বনরুটি খাওয়ানো হয়। পরের দিন তাকে কিছু একটা খাওয়ানোর পর সে জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফিরলে মনে করেছিল সে অপহরণকারীদের হেফাজতে আছে। সে জন্যই সে মিনতি করে বলছিল আমাকে আর মারবেন না। আর কখনও নিউজ করবো না। সেই আকুতি শুনতে পেয়ে সীতাকুণ্ডের লোকজন তাকে উদ্ধার করতে যায়।
এতো নিখুঁতভাবে শহরের রাজপথ থেকে সাংবাদিক সরওয়ারকে উঠিয়ে নেয়া, শরীরে আঘাতের চিহ্ন না থাকার জন্য কাপড় জাতীয় কিছু পেছিয়ে আঘাত করা। বেহুশ করে আবারও ব্রিজের নিচে জঙ্গলে ফেলে যাওয়া যেন প্রশিক্ষিত তৃতীয় কমান্ডার বাহিনীর সফল অপারেশন।
এইসব কথা বলার সময় কেঁদে উঠে বার বার বলছিল তারা আমাকে অনেক মেরেছে ভাইয়া। তিনদিন নিজের মলমূত্রের উপর পরে ছিলাম।