কিশোর গ্যাং রোধে সাজা আরও বাড়ানো দরকার

দেশে শিশু ও কিশোরদের অপরাধ নির্মূল করার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদেরও দণ্ড দেওয়া এবং আরও বাড়ানো দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বরগুনার জেলা শিশু আদালত। আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত এ মন্তব্য করেছেন।

একইসঙ্গে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে এ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বলেও মন্তব্য করেছেন আদালত। এছাড়া সারাদেশে কিশোর গ্যাং সৃষ্টির অপসংস্কৃতির ধারা প্রতিরোধ করতেই অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের এ শাস্তি দেওয়া হয়।

আইনজীবী মো. গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, শিশু আসামিদের দণ্ড বাড়ানোর পাশাপাশি রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত মিন্নি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মিন্নির অনৈতিক ও বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে রিফাত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। এই কিশোর আসামিরা প্রাপ্তবয়স্ক দণ্ডিত আসামিদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা ও মৌলিক শিক্ষার অভাবে এই কিশোররা বিপথগামী হয়েছে। তাই এই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে দেশে কিশোর অপরাধের সংখ্যা এবং কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা বাড়বে’।

এ বিষয়ে মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও বরগুনার শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রায়ের অবজারভেশনে আদালত বলেছেন, ‘দেশে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অপরাধের তুলনায় কিশোরদের শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় গডফাদাররা কিশোরদের ব্যবহার করছে। তাই কিশোর অপরাধ নির্মূলের জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক আসামিদেরও শাস্তির পরিমাণ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রায়ের অবজারভেশনে কিশোর অপরাধ দমনে আদালত যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে আমিও একমত পোষণ করছি। কারণ কিশোর অপরাধীদের শাস্তি না বাড়ানো হলে এদের অপরাধের পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যা মামলার প্রথম রায়ে মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃতুদণ্ড দেন আদালত। তখনও মিন্নিকে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মন্তব্য করেন আদালত।

এদিকে, মামলাটির অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ছয়জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং বাকি তিনজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বরগুনা জেলা নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

এরমধ্যে ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো, মো. রাশিদুল হাসান রিশান ফরাজী (১৭), মো. রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার (১৫), মো. আবু আবদুল্লাহ রায়হান (১৬), মো. ওলিউল্লাহ অলি (১৬) মো. নাইম (১৭) ও মো. তানভীর হোসেন (১৭)। পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্তরা হলো, জয় চন্দ্র সরকার চন্দন (১৭), নাজমুল হাসান (১৪), রাকিবুল হাসান নিয়ামত (১৫) ও মো. সাইয়েদ মারুফ বিল্লাহ মহিবুল্লাহ (১৭)। এছাড়া তিন বছরের সাজা পেয়েছে প্রিন্স মোল্লা (১৫) নামে অপ্রাপ্তবয়স্ক এক আসামি।

আর বেকসুর খালাস পেয়েছে মারুফ মল্লিক (১৭), রাতুল সিকদার জয় (১৬) ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে বরগুনা জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় মামলাটির ছয় আসামিকে। আর জামিনে থাকা আট আসামি আদালতে আসে তাদের আগেই।

করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকার পরও মাত্র একবছর চার মাসের মাথায় নিষ্পত্তি হচ্ছে বর্বরোচিত এ হত্যা মামলা। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রায় ঘিরে দেশের সব মহলের নজর ছিল আজ বরগুনার আদালতে। আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

তখন বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী বাংলানিউজকে বলেন, আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় কেন্দ্র করে বরগুনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।

গত ১৪ অক্টোবর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান রায়ের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।

গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এরমধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়।

গত ৮ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত। এরপর ১৩ জানুয়ারি থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। মোট ৭৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়।

এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির রায় ঘোষণা করেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান। রায়ে নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দেন। আর বাকি চারজনকে বেকসুর খালাস দেন।