নেপিয়ার থেকে ক্রাইস্টচার্চ- বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্রনাট্য একই। পাশাপাশি বোলিংটাও। আবারো ব্যর্থতার গল্প লিখলো বাংলাদেশের ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগ। যদিও টপ অর্ডারের ব্যর্থতার পর আবারো ত্রাতা হয়ে দেখা দেন মোহাম্মদ মিঠুন, ব্যাক টু ব্যাক ফিফটি পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ শেষ অবধি লড়াই করার মতো পুঁজি পেলেও ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করে দলকে সহজ জয় পাইয়ে দিয়েছেন কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল। তাতে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে কিউইরা (২-০)। বাংলাদেশ আবারো হেরেছে ৮ উইকেটে।
ক্রাইস্টচার্চের কনকনে ঠান্ডা, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়াও টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড দলপতি কেন উইলিয়ামসন। নেপিয়ারে প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে হেরে ব্যাকফুটে থাকা টাইগাররা সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.৪ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তোলে ২২৬ রান। জবাবে, ৩৬.১ ওভারে জয় তুলে নেয় ২ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড।
১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রথম ম্যাচের একাদশ অপরিবর্তিত রেখে খেলতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা এবারও ভালো হয়নি। ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (৫) এবং লিটন দাস (১) দ্রুত সাজঘরে ফেরেন। তামিম প্রথম রানের দেখা পেয়েছেন ১৫ বল খেলে, ২৮ বলে করেন ৫। তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকার থিতু হলেও ফের ভালো কিছুর আশা জাগিয়ে ফিরে যান দলের ৪৮ রানে। ২৩ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে করেন ২২ রান। ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামা মুশফিকের ব্যাট থেকে বড় ইনিংস আসেনি, ৩৬ বলে করেন ২৪ রান। মোহাম্মদ মিঠুন ব্যাট হাতে আবারো রান পেয়েছেন। আগের ম্যাচে নেপিয়ারে ফিফটি করার পর এই ম্যাচেও ফিফটি করেছেন। ৬৯ বলে সাতটি চার আর একটি ছক্কায় করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৭ রান। ১৫তম ওয়ানডে খেলতে নেমে পেয়েছেন চতুর্থ ফিফটি।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭ রানে বিদায় নেন। সাব্বির রহমান ৬৫ বলে সাতটি বাউন্ডারিতে করেন ৪৩ রান। মিঠুনের সঙ্গে সাব্বিরের ছিল ৮২ বলে ৭৫ রানের জুটি। ১৬৮ রানের মাথায় মিঠুন আউট হওয়ার পর মেহেদি মিরাজ কিছুটা সময় ধরে খেলেন। তবে দলীয় ১৯০ রানে মিরাজ মারমুখী হতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন। মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ১৬ রান। সাইফুদ্দিন কিছুটা টিকে থাকলেও কিছু করতে পারেননি। ৪৬তম ওভারেই বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলে। দলের সংগ্রহ তখন ২১১ রান।
দলপতি মাশরাফি শেষ সময়ে কিছু করতে পারেননি, মোস্তাফিজকে সঙ্গে নিয়ে খেলেছেন শেষ ওভার পর্যন্ত। সাইফুদ্দিন ১০, অধিনায়ক মাশরাফি ১৩, মোস্তাফিজ ৫* রান করেন। সব মিলিয়ে চারটি ক্যাচ ছেড়েছে কিউইরা, মুশফিকেরই দুটি। ১৭টি ওয়াইডসহ অতিরিক্ত থেকে এসেছে ২৩ রান। তা না হলে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যেত দুইশোর আগেই।
নিউজিল্যান্ডের লুকি ফার্গুসন তিনটি, জেমস নিশাম দুটি, টড অ্যাসল দুটি করে উইকেট তুলে নেন। এছাড়া, একটি করে উইকেট পান ম্যাট হেনরি, ট্রেন্ট বোল্ট এবং কলিন ডি গ্রান্ডহোম।
২২৭ রানের টার্গেটে ব্যাটিংয়ে নামে নিউজিল্যান্ড। অষ্টম ওভারে দলীয় ৪৫ রানের মাথায় মোস্তাফিজ ফিরিয়ে দেন ওপেনার হেনরি নিকোলসকে। বাউন্ডারি লাইনে লিটন দাসের তালুবন্দি হওয়ার আগে তিনি করেন ২৩ বলে ১৪ রান। এরপর জুটি গড়েন ওপেনার মার্টিন গাপটিল এবং দলপতি কেন উইলিয়ামসন। দলীয় ১৮৮ রানের মাথায় কিউইরা হারায় ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করা গাপটিলকে। আগের ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন গাপটিল। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরি। ইনিংসের ২৯তম ওভারে মোস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকারে ফেরার আগে তিনি ৮৮ বলে করেন ১১৮ রান। এই সেঞ্চুরিয়ানের ব্যাট থেকে আসে ১৪টি চার আর ৪টি ছক্কা।
দলপতি কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেইলর পরের পথটা সহজেই পাড়ি দেন। এই জুটিতে আসে ৪৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪১ রান। উইলিয়ামসন ৮৬ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন। রস টেইলর ২০ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ২১ রান করে অপরাজিত থাকেন। মোস্তাফিজ ৯ ওভারে ৪২ রানে দুটি উইকেট নেন। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সিরিজের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড।