নাগরিকত্ব (সংশোধিত) বিল ভারতের রাজ্যসভায় পাস না হওয়ায় ভীষণ বিরক্ত আসামের অর্থমন্ত্রী ও সিনিয়র বিজেপি নেতা হিমান্ত বিশ্বশর্মা। তিনি এ ঘটনায় ক্ষোভ সামলে রাখতে পারেন নি। বলে দিয়েছেন, এই বিল পাস না হওয়ায় আসামে যে ১৭টি আসন আছে তাতে বিজয়ী হবেন (কথিত) বাংলাদেশী মুসলিমরা। বুধবার তার কণ্ঠে এমন ক্ষোভ ঝরে পড়ে। এর মধ্য দিয়ে তিনি আসামে বসবাসকারী মুসলিমদের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। তাদের দাবি, এরা কথিত বাংলাদেশী মুসলিম। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা পিটিআই।
তিনি বুধবার বলেছেন, রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব বিল পাস না হওয়া আসামের জন্য পরাজয়। তিনি আরো দাবি করেন, এই বিলটি ছাড়া আসামের ১৭টি আসনেই বিজয়ী হবেন (কথিত) বাংলাদেশী মুসলিমরা।
উল্লেখ্য, নর্থ ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের আহ্বায়কও এই বিশ্বশর্মা। তিনি বলেছেন, তার দল এই বিলের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ ইস্যুকে সামনে রেখে তারা লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করবেন।
৮ই জানুয়ারি নাগরিকত্ব বিষয়ক ওই বিলটি লোকসভা পাস করে। এরপর বুধবার তোলা হয় উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের আগে এটিই ছিল রাজ্যসভার শেষ অধিবেশন। তাই ওই বিলটি রাজ্যসভা আগামী ৩রা জুন পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে। এ প্রসঙ্গে হিমান্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, আমি মনে করি রাজ্যসভায় বিলটি পাস না করার অর্থ হলো আসামের পরাজয়। এখন আসামের নাগরিকদের কে রক্ষা করবেন? এখন রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই এনডিএ সরকারের। তাই তারা বিলটি আবার উত্থাপন করতে পারছে না। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট যদি আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তাহলে বিলটি আবার তোলা হবে। তিনি আরো বলেন, আমার দল এ বিলটিকে সমর্থন করে। বিজেপি অঙ্গীকারাবদ্ধ। এর প্রতি চিরদিন অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে। এই প্রতিশ্রুতিতে নির্বাচনে লড়াই করবে বিজেপি।
নিম্নকক্ষ লোকসভায় গত মাসেই পাস হয়েছিল নাগরিকত্ব বিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে বুধবার পার্লামেন্টের শেষ অধিবেশনে বিলটি অনুমোদন পায়নি। এ বিলের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছিলেন এতে তাদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। অন্যদিকে আসাম রাজ্য সংগঠনের সদস্যরা বিলটি আটকে দেওয়ার জন্য রক্তবন্যা বইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। বিলটিকে ঘিরে উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রতি বিক্ষোভও হয়েছে। মঙ্গলবার সরকারপক্ষ থেকে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু বিরোধীদের হট্টগোলে এদিন রাজ্যসভার অধিবেশন সারা দিনের জন্য মুলতবি করা হয়। এর আগে গত ৮ জানুয়ারিতে লোকসভায় পাস হয়েছিল বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়া অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্বের প্রস্তাব সম্বলিত এই সংশোধনী বিল। সঙ্গে সঙ্গেই তা উত্তেজনা ছড়িয়েছিল উত্তর-পূর্ব ভারতে। অমুসলিম শরণার্থীদের তালিকায় আছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, শিখ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষরাও। বিলের আওতায় প্রতিবেশী দেশগুলোতে ধর্মীয় সহিংসতার শিকার হয়ে কেউ ভারতে থাকার আবেদন করলে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম রাখা হয়েছে।