চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধনে বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও কুশপুত্তলিকা দাহ
সমগ্র বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারদের ওপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন করা হচ্ছে যা রাষ্ট্রের জন্য অশনিসংকেত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে ফেলার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলোতে স্বাধীনতা বিরোধীদের বংশধররা অনুপ্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মানুষদেরকে কোণঠাসা করে রেখেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীর দোসররাই সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা ও রক্তাক্ত করছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ আগস্ট ২০২০ তারিখে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর ন্যাক্কারজনক ভাবে হামলা করা হয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধনে বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সমর্থকরা এই নগ্ন হামলা চালিয়েছে যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী। জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে আসা হাইব্রিড মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর এমপির এহেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। মোস্তাফিজ বাহিনীর নগ্ন হামলায় আহত হয়েছেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাফফর অাহমদ, বাঁশখালীর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অাবুল হাশেম, সাতকানিয়ার কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অাবু তাহের, বীর মুক্তিযোদ্ধা অাজিমুল ইসলাম ভেদু, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার (অর্থ) বীর মুক্তিযোদ্ধা অাবদুর রাজ্জাক, প্রেস ক্লাবের সা. সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা জয়নাল অাবেদীন, জহির উদ্দীর মো. বাবর, ইমরানুল ইসলাম তুহিন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু সাদাত মো. সাইয়েম, মোব্বাশের হোসেন সোহান ও কামরুল হুদা পাভেল। এছাড়াও ১০ থেকে ১২ জন ফটো সাংবাদিক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এরকম ঘৃণ্য হামলার ঘটনায় আমরা হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা মানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের ওপর হামলা বলে আমরা মনে করি। কিছুদিন পূর্বে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়াই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফন করা হয়েছিল। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ডা. আলী আশরাফের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়াই দাফন সম্পন্ন হয়েছিল। তিনি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ও চট্টগ্রাম জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ করায় ১৯৭৭ সালের ১১ আগস্ট তৎকালীন অবৈধ সরকার মৌলভী সৈয়দকে গ্রেপ্তার করে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করেছিল। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। রাত অবধি জানাযার কথা জানিয়ে মাইকিংও করা হয়েছিল। বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারকে জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের পক্ষ থেকে জানানোও হয়েছিল। যথাসময়ে থানা ও জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত না থাকায় এবং সালামি পতাকার অভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়া জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছিল যা রাষ্ট্রীয় নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবমাননা। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কখনোই এর দায়ভার এড়াতে পারেন না। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা করার অপরাধে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার প্রমাণ সুস্পষ্ট হওয়ায় দায়ীদেরকে দ্রুত অপসারণ ও বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর ষড়যন্ত্রের কারণে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়া বিদায় নিতে হয়েছে। পরবর্তীতে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা সেই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধ কে নিয়ে কটূক্তি করে বলেছিলেন বাঁশখালীতে নাকি কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। হাইব্রিড মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপির এহেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের প্রজন্মরা। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেই মানববন্ধনে ন্যাক্কারজনক ভাবে হামলা চালায় মোস্তাফিজুর রহমান এমপির সন্ত্রাসী বাহিনী। আমরা অবিলম্বে হামলার নির্দেশদাতা আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী কে আওয়ামী লীগের দলীয় পদ ও জাতীয় সংসদ থেকে অপসারণসহ গ্রেফতার দাবি করছি। অন্যথায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সমগ্র বাংলাদেশ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হবে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এর দাবিসমূহ:
১। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বক্তব্য দেয়ার অপরাধে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপিকে দলীয় পদ ও জাতীয় সংসদ থেকে অপসারণসহ দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
২। হামলার সাথে জড়িত মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপির সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রত্যেকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩। সমগ্র বাংলাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন বন্ধ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে।











