চবি শিক্ষকদের ‘নিঃশ্বাসে হাটহাজারী, ২০২০’

নিজস্ব প্রতিবেদক:: শিক্ষকদের উদ্যোগ কখনো বৃথা যায় না, এটা আরো একবার প্রমাণিত হলো সেন্ট্রাল অক্সিজেন যুগে হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর প্রবেশের মাধ্যমে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সিস্টেম চালুর উদ্যোগ বিভিন্ন দিক থেকে আসলেও এমপি মহোদয় খরচ বিবেচনায় সেটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি। এ উদ্যোগগুলোর মধ্যে হাটহাজারীর সন্তান ইন্জিনিয়ার মিথুন রাহা তাদের ‘প্রযত্নে ক্যানভাস’ নামক একটি সংগঠনের সহায়তায় স্বল্পখরচে তা স্থাপনের আগ্রহ দেখায়। কথা বলেন তার ব্যাচম্যাট চবি’র কয়েকজন শিক্ষকের সাথে। খরচের পরিমাণ জানার পর আমার সেসমস্ত শিক্ষক সহকর্মীদের মনে হলো এখরচ আমরা নিজেরাই দিয়ে দিতে পারি। শুরু হলো শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে হাটহাজারীর প্রায় ৬৩ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে গঠিত হলো CU FACULTIES HATHAZARI.
প্রকল্প হাতে নেয়া হলো ‘নিঃশ্বাসে হাটহাজারী, ২০২০’। আহবায়ক করা হলো চবি’র সাবেক রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. কামরুল হুদা স্যারকে। জুম মিটিং করা হলো। সিনিয়র জুনিয়র সবার অভুতপূর্ব সাড়া। দায়িত্ব দেয়া হলো আহবায়ক স্যারকে এম পি সাহেবের সাথে কথা বলার জন্য। পরের দিন স্যার জানালেন, এমপি সাহেব বলেছেন শিক্ষকরা উদ্যোগ নিলে তিনি রাজী আছেন এবং প্রাথমিক সিস্টেম স্থাপনের পুরো খরচ তিনি যোগাড় করবেন। সিলিন্ডার সংগ্রহের কাজটা আমাদের করতে হবে।
এরপর আবার সিলিন্ডার নিয়ে যোগাযোগ শুরু। শিক্ষকদের সাথে জুম মিটিং এ যোগ দিয়েছিলেন ইন্জিনিয়ার মিথুন রাহা এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডাঃ ইমতিয়াজও।

আবুল খায়ের গ্রুপের ডিএমডি আবু সাইদ চৌধুরী বাবলু ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলেন প্রফেসর ড. কামরুল হুদা স্যার। দুদিনের মধ্যেই সিলিন্ডার চলে এসেছে। তবে সে সিলিন্ডার গুলো সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্ট সিস্টেম এর সাথে যায় না। তবে ডাঃ সাহেব জানালেন তা এখন ব্যবহার হচ্ছে। তারপর বড় সিলিন্ডার সংগ্রহের জন্য চেষ্টা চলছিল। এরমধ্যে সবচেয়ে কমমূল্যে ডাঃ সাহেব সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করলেন এবং শিক্ষকদের জানালেন ব্যয়ভারটা আমাদেরই বহন করতে হবে।
মাত্র তিনদিনের মধ্যেই হাটহাজারী চবি শিক্ষকগণ তাদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সেই টাকা জমা করেন একটি যৌথ হিসাবে। আমরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ডাঃ সাহেবকে একটা চেক দিলেন তাদের চাহিদা অনুযায়ী।
ইতিমধ্যে ডাঃ সাহেব এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এম পি সাহেবের পরামর্শে কিছু অনুদান সংগ্রহ করলেন। সকলের যৌথ প্রচেষ্টা ছাড়া কোন কাজ সফল হয় না।

করোনা রোগীর চিকিৎসায় হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন। প্রায় ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এই অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়।

সোমবার (১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে দশটার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এ সময় উপস্হিত ছিলেন চবি’র সাবেক রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. কামরুল হুদা, ইউএও রুহুল আমিন, টিইএচও আবু সৈয়দ মোঃ ইমতিয়াজ হোসাইন, চেয়ারম্যান এড. মো শামীম, ওসি (অপারেশন) তৌহিদুল করিম, অধ‍্যক্ষ ফরিদ আহমেদ, সৈয়দ মনজুরুল আলম, হাবিবুর রহমান রাজু, মো হাসান, জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ।

এই সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের ফলে এখন থেকে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ১৬টি ওয়ার্ডের ২২টি শয্যা, ৩টি কেবিনে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে। ৬ হাজার ৮০০ লিটার ধারণ ক্ষমতার ৩০টি সিলিন্ডার দিয়ে সার্বক্ষণিক অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে।

হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ এস এম ইমতিয়াজ হোসাইন বলেন, সরকারি উদ্যোগ এবং বেসরকারি সহায়তায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা হয়েছে।

এ উদ্যেক্তা শিক্ষকদেন একজন আলী আরশাদ চৌধুরী বলেন আমরা প্রচারের জটিলতায় গিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বাধা হতে চাইনি। আমরা হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ডাঃ সাহেবের পরামর্শে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দেইনি। শিক্ষকরা সেদিন মিথুন রাহার ডাকে সাড়া না দিলে এটি হতো কিনা সন্দেহ আছে আমার।

এতে করে রোগীদের অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হলে আমরা তা সরবরাহ করতে পারবো। এই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা উপকরণ সংযোজনে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।