‘জাগো তারুণ্য রুখো জঙ্গিবাদ’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের মনোজগৎ জাগ্রতকরণ ও জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় এক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেমিনার করে আসছে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন।
‘জাগো তারুণ্য রুখো জঙ্গিবাদ’ শিরোনামে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমের এবারের সেমিনারটির আয়োজন করা হয়েছিল রাজধানী বনানীর সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এবারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সাংসদ সাবিনা আক্তার তুহিন। তিনি বলেন, ভাষার মাসে সকল ভাষা সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে।
শক্তি পাচ্ছি, নিজেতে তরুণ মনে করি। তাই সকল তরুণদের সাথে নিয়ে জঙ্গিবাদ রুখতে চাই। ৭ বছর বয়সে কোরআন শিক্ষা নিয়েছি, বাংলায় পড়েছি। কোথাও বলা হয়নি মানুষ হত্যা করা সওয়াবের কাজ। বরং এটা বলা হয়েছে- মানুষ হত্যা মহাপাপ।
ভ্রান্ত আদর্শের উপর ভর করে তরুণরা জঙ্গি হয়ে ওঠে। আর এই আদর্শ ছড়িয়ে দিচ্ছে কতিপয় গোষ্ঠী, ধর্মের নামে তরুণদের মিথ্যা ধর্মীয় ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে নিচ্ছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের চোখে কালো পতাকা একে দিতে চায়। কিন্তু আমরা সতর্ক। লাল সবুজের এই বাংলাদেশে কোন অপশক্তি কোনদিন জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করতে পারবে না। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা বসে নেই। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি সফলতার সাথে এদেশ থেকে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নিমূর্ল করেছে। যে চেতনার উপর ভর করে এদেশে জঙ্গিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল সেই চেতনাকে রুখতে এবং এর ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে সামাজিক জাগরণ সৃষ্টির সুচিন্তা ফাউন্ডেশন যে কাজ করে যাচ্ছে সে জন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের উচিত এই ধরণের সামজিক সচেতনতা গড়ে তোলা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়িকা নিপুন, আমরা আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ¯œ্যাপচ্যাটে অনেক বেশি সময় দিয়ে থাকি। যার ফলে পরিবার মা-বাবা, ভাই-বোনের সাথে দূরত্ব তৈরী হয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকেই ঘটে যাচ্ছে নানা অঘটন। তরুণদের টার্গেট করে এই সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মাধ্যমে মিথ্যা ধর্মীয় ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তরুণদের জড়ানো হচ্ছে জঙ্গিবাদের মত ভয়ঙ্কর জগতে। নানাভাবে ব্রেনওয়াশ করে এক একজন তরুণকে আতœঘাতী হিসেবে তৈরী করছে। সে সন্তানটির সবচেয়ে ভাল বন্ধু তার বাবা-মা, সেই সন্তান ভুল করতে পারে না। সন্তানের ভালো বাবা-মা’র চেয়ে আর কেউ চায় না। ভালো কাজে সোশ্যাল মিডিয়া কাজে লাগাতে হবে। আমার পরিচিত অনেকেই আছেন যারা অনলাইনে ছোট ছোট ব্যবসা শুরু করে স্টুডেন্ট অবস্থায়ই প্রতিষ্ঠিত।
তিনি আরও বলেন, সামনে যারা বসে আছেন সবাই আগামী দিনের বাংলাদেশ। সচেতনার জায়গা থেকে পরিবারের যেমন দায়িত্ব রয়েছে তেমনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও নিয়মিত জঙ্গিবাদবিরোধী নানা লেসন দিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলতে। আমরা ছোটবেলা যেভাবে কাটিয়েছি এখন বদলে গেছে। সব সময় ভালোর সাথে থাকলে একজন ভাল মানুষ হওয়া অনেক সহজ। আর দেশটাকে নিরাপদ, সুন্দর, মাদক, ও জঙ্গিবাদমুক্ত রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ও এই কার্যক্রমের সমন্বয়ক কানতারা খান। শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, ধর্ম প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং অধিকার। সেই বিশ্বাস ও অনুভূতির জায়গাটিতে তারা আঘাত করছে ক্ষমতা ও বাণিজ্যিক স্বার্থের লোভে। যার সঙ্গে ধর্মের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই।
ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এই সবকিছুই সম্ভব হয়েছে সে সময়ের তরুণদের হাত ধরে। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশে^ যত বড় বড় অর্জন রয়েছে তার পেছনে তরুণদেরই অবদান রয়েছে। তাই সুচিন্তার এই শ্লোগান- ‘জাগো তারুণ্য, রুখো জঙ্গিবাদ’।
বক্তব্য রাখেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএনএম মেশকাত উদ্ দীন। তিনি বলেন, আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে আসছি। সাংস্কৃতিক নানা কার্যক্রমের জন্য ১৫টি ক্লাব একই সাতে কাজ করে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান বিশ্ব তারুণ্যের উপর নির্ভরশীল। এই তরুণরাই একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে আবার একটি জাতি ধ্বংসের জন্য তরুনরাই যথেষ্ট। তাই তরুণ প্রজন্মকে সচেতন হওয়া জরুরি। কেননা এই তারুণ্যের শক্তিতে সন্ত্রাসবাদের কাজে লাগিয়ে একটি মহল ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চায়। তাই কারো ভুল প্ররোচণা থেকে সাবধান থাকতে হবে।
সুচিন্তা’র গবেষণা সেলের পক্ষ থেকে আশরাফুল আলম শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদ সমর্থন-অসমর্থন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আজ সারাবেলা’র সম্পাদক জববার হোসেন।