নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে মরিয়া হয়ে কাজ করেছি: নাছির

নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে মরিয়া হয়ে পাঁচ বছর কাজ করতে চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

বুধবার (০৫ আগস্ট) দুপুরে নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে সিটি করপোরেশন কর্মকর্তা কর্মচারীদের আয়োজিত প্রীতি সম্মিলনে মেয়র এসব কথা বলেন।

মেয়র বলেন, চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩১ বছরের সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি। সাড়ে ৩ বছর চেষ্টা করে প্রবিধানমালা অনুমোদন করিয়েছি। আগে গ্রেডেশন তালিকা টাঙিয়ে দিয়েছি। এর ভিত্তিতে পদোন্নতি হবে। চসিকের জন্য আরেকটা নতুন অর্গানোগ্রাম প্রক্রিয়াধীন আছে। যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম চসিকের কর্মীদের বেতন আসতো মাসে ৯ কোটি টাকা, এখন তা ১৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এরপরও নিয়মিত বেতনভাতা দিতে সমর্থ হয়েছি।

মানুষের, চসিকের কর্মীদের যে ভালোবাসা পেয়েছি তাতে আমি মনে করি সফল। ১০০ ভাগ আত্মতৃপ্তি নিয়ে শেষ কর্ম দিবস অতিবাহিত করছি। আমৃত্যু মানুষের পাশে থাকবো। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করি আমি। আমার দুয়ার খোলা সবার জন্য।

আমি বুঝেছিলাম নগরবাসীর প্রত্যাশা ও চসিকের দায়িত্ব তার জন্য ঐক্য দরকার। ১০-১১ জন কাউন্সিলর ভিন্ন দলের। আমি চিন্তা করেছি উনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। আমার উচিত তাকে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা। চসিকের অনেক কর্মচারী আমার প্রতিদ্বন্দ্বীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছেন। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর বার্তা দিয়েছি- চসিকের অর্পিত দায়িত্ব সততা, আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেন।

তিনি বলেন, সফলতা একার পক্ষে সম্ভব নয়, এটি টিম ওয়ার্ক। চসিক পরিবারের আন্তরিক সহযোগিতার কারণে সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। এর জন্য কৃতজ্ঞতা। আমি চেষ্টা করেছি যার যার সম্মান মর্যাদা দিতে। একটি পরিবার হিসেবে কাজ করতে পেরেছি।

চসিক কর্মীদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, অনেক সময় আমার রুমে আসার পর মর্যাদা অনুযায়ী বসতে পারেননি। চেয়ার খালি ছিল না। এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমরা জনপ্রতিনিধি। নির্বাচনে হারতেও পারি, জিততে পারি। দেশ এগিয়ে যাওয়া মানে আমি এগিয়ে যাওয়া। আত্মকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা উচিত।

কিছু মিডিয়ায় চসিকের দেনাকে হাইলাইট করা হচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমরা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। ৩৯৫ কোটি টাকা সরকারের প্রকল্পে চসিকের ম্যাচিং ফান্ড। আগের মেয়রের আমলের ৩০০ কোটি দেনার মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। আমরা কিছু হাইড করছি না। বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা সমাজকে ক্ষতি করছে। বিভক্তি-বিভাজন এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে।

চসিকের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন সংবাদ পরিবেশনের আগে যাচাই করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান মেয়র।

কাউন্সিলর সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু বলেন, ১৯৭৭ সাল থেকে নির্বাচিত কাউন্সিলর। একবার আওয়ামী লীগ নির্বাচন বয়কট করায় হতে পারিনি। কখনো নির্বাচিত পরিষদের শেষ দিন এ ধরনের অনুষ্ঠান হয়নি। মেয়র ষষ্ঠ পরিষদে না হলেও আবার মেয়র হতে পারেন। অনেক সময় আছে।

কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, চসিকের কোনো নির্বাচিত পরিষদের বিদায়বেলায় প্রীতি সম্মিলন আয়োজন এটিই। পাঁচ বছর কাউন্সিলরা স্বাধীন ও সফলভাবে কাজ করতে পেরেছি। আমরা মানবিক মেয়র পেয়েছিলাম।

সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী বলেন, রাজনীতিবিদের শক্তি মানুষকে ভালোবাসা। মেয়র নাছির মানুষকে ভালোবাসেন। চসিকের প্রতিটি কর্মকর্তা স্বাধীনভাবে কাজ করেছেন। চসিককে গতিশীল রেখে যাচ্ছেন মেয়র।

প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমেদ বলেন, চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নগরবাসীর সেবক। জনগণের করের টাকায় আমরা বেতন পাচ্ছি। চসিকের প্রকৌশল বিভাগের কাজ দৃশ্যমান। আমরা মেয়রের গাইড লাইন অনুযায়ী চেষ্টা করেছি। আমাদের বিভাগের কাজের ব্যর্থতার জন্য মেয়রকে নগরবাসী, মিডিয়ার কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে। আমরা দুঃখিত।

প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল ইসলাম বলেন, চসিকের রাজস্ব বিভাগ নিয়ে আতঙ্কে ছিলাম। সিআরও পদকে মনে করা হয় চোরদের সম্রাট। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ২২০ জনকে একযোগে বদলি করেছি। কারও চেহারাও দেখিনি। রাজস্বের পরিমাণ খুব বেশি বাড়াতে পারিনি। নিজেরা নিজেরা মামলা করায় এ বিভাগে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া যায়নি। হাসিমুখে না বলাটা মেয়রের কাছ থেকে শিখেছি।

প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া বলেন, মেয়র মহোদয় ভালো মানুষ, সুন্দর মনের মানুষ। তার মতো প্রতিষ্ঠান প্রধান পাওয়া ভাগ্যের। আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছি। আমরা এককভাবে অমর একুশে বইমেলা করতে সক্ষম হয়েছি। ১৩ জন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি।

প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ছাত্রজীবন থেকে মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে সম্পর্ক। চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ দুইটি অ্যাওয়ার্ড আনতে সক্ষম হয়েছে মেয়রের নেতৃত্বে। মেয়রের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমরা কোনো বাধা পাইনি।

প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ একেএম রেজাউল করিম বলেন, মেয়রের গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি বাস্তবায়নে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। মেয়রের হাতের লেখা সুন্দর। উনার মতো সাহসী মানুষ আমার জীবনে কম দেখেছি।

সভাপতিত্ব করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী মো. সামশুদ্দোহা। বক্তব্য দেন প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর সালেহ আহমদ চৌধুরী, ইসমাইল বালী, মোহাম্মদ আজম, আনজুমান আরা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন আহমেদ, সারওয়ার হোসেন খান প্রমুখ।