অনুগল্পঃ বিপর্যয় – মোহাম্মদ হোসেন

এক পশলা বর্ষণ হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। উঠোনে পানি জমে একাকার। কাদাও আছে প্রচুর। যেন বা মিতালী গড়েছে ওরা। এই কাদা জল মানুষ যেখানে পায়েই মাড়াতে চায় না, সেখানে একটি লোক উপুড় হয়ে পড়ে আছে কী নির্বিকার চিত্তে! পাথরের মতো নিশ্চল। যেন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর দুই চোখের পাতা এক করে একটু দম নিচ্ছে, হাড়ে বাতাস লাগাচ্ছে। ভেজা জামাকাপড় লেপ্টে আছে গায়ের সাথে। পায়ের উপর পাছা দুলিয়ে হেলেদুলে উঠে গেছে একটা প্রমাণ সাইজের জোঁক। কয়েকটি ছোট ছোট নাম-না-জানা পোকা পানির উপর কিলবিল কিলবিল করছে নাকের কাছে মুখের কাছে। বেঁচে থাকতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি পোশাক-আশাক প্রচন্ড ভালবাসতো যে লোকটি তার এমন বেহাল দশায়ও মন গলছে না কারোরই। একটা কাক বিদ্যুতের খুঁটির উপর বসে কা কা করছে। হয়তো বা বলছে, মানবতা এখানে দেখি উপুড় হয়ে পড়ে ময়লা জল খাচ্ছে। পরে এটি উড়ে যাওয়ার সময় মল ত্যাগ করে যায় যা লোকটির কানের কাছে পড়ে হয় একদম মাখামাখি অবস্থা।

আপনজন সবাই ত্যাজ্য করেছে লোকটিকে। যার রূপে মুগ্ধ হয়ে সে বাবা মাকেও ত্যাগ করতে কার্পণ্য করেনি একদিন, সেই প্রিয়তমা স্ত্রী আজ দেখেও না দেখার ভাণ করে দরজা জানালা বন্ধ করে বসেছে পানের কৌটা নিয়ে। জীবনসঙ্গিনীর এমন নির্দয় আচরণ আশি সিক্কা ওজনের চড়ের মতোই লেগেছে তার বুকে। তার থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেল যখন দেখল আদরের ছেলেমেয়ে দুটো উচ্চণ্ড আতংকে লুকিয়েছে ঘরের কোণে। পাড়াপড়শি যারা আছে ওরাও ঘেঁষছে না কেউ কাছে। লোকটির একটাই দোষ, পরকীয়া। নিষিদ্ধ প্রেমে জড়িয়েছে করোনা সুন্দরীর সাথে। এই বিদেশিনীর রূপসুধা পান করার জন্য উন্মাতাল হয়ে ঘুরেছে পথে প্রান্তরে সংসারের স্বার্থের নাম করে। তো এই ধরণের লোকের করুণ মৃত্যুতে কার বা কী আসে যায়?

তাই তো আপনপর সবাই দিয়েছে মনের দরজায় খিল। শেষ নিঃশ্বাসের আগে ‘আমায় একটু পানি দাও না মামণি’ বলে করুণ আর্তি করেও জলের মধ্যে থেকে জলতৃষ্ণায় বলহীন হয়ে শ্বাসকষ্টে ভূগতে ভূগতে তাকে পাড়ি জমাতে হলো পরপারে।
==
মোহাম্মদ হোসেন
সিনিয়র অফিসার
প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড
কক্সবাজার শাখা
কক্সবাজার।
০১৮১৫-৮৫০৩৬৯