‘হিরো’ চিকিৎসক লির পুত্রসন্তানের জন্মগ্রহণ

চীনের উহান শহরে নতুন ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে বলে প্রথমবার সতর্ক করেছিলেন তিনি৷ তার মাধ্যমেই বিশ্ববাসী প্রথম জানতে পেরেছিল প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সম্পর্কে। তবে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল চীনা পুলিশ৷ শেষ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয় উহানের ৩৪ বছর বয়সি চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং-এর৷ পরে তাকে বিশ্বজুড়ে ‘হিরো’ উপাধি দেওয়া হয়।

এবার পুত্রসন্তানের জন্ম দিলেন সেই চিকিৎসকের স্ত্রী ৷ এই সুখবর দিয়ে চীনের সোশ্যাল মিডিয়ায় এক আবেগঘন বার্তায় মৃত চিকিৎসকের স্ত্রী লিখেছেন, ‘তুমি কি স্বর্গ থেকে দেখতে পাচ্ছো? তোমার দেওয়া শেষ উপহার আজ জন্মগ্রহণ করল৷ আমি খুব ভাল ভাবে ওর যত্ন করব৷’

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি সদ্যোজাতের ছবিও শেয়ার করেছেন প্রয়াত চিকিৎসকের স্ত্রী ফু জুইজি৷ চীনের যে আটজন চিকিৎসক প্রথমবার অন্যান্য চিকিৎসকদের করোনা সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন, তাদের হেফাজতে নিয়েছিল সে দেশের পুলিশ৷ এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন লি৷ ডিসেম্বর মাসে উহানে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পরই প্রথম বিষয়টি অন্যান্য চিকিৎসকদের নজরে আনেন লি৷

চাইনিজ মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাট-এ মেডিক্যাল স্কুলের সাবেক গ্রুপে প্রথমবার এই বিষয়ে সতর্কবার্তা দেন লি৷ সেখানে তিনি জানান, সামুদ্রিক খাবারের স্থানীয় একটি বাজারের সাতজনের শরীরে সার্স-এর মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে এবং তাদের হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে৷

লি বিশদে ব্যাখ্যা করে লেখেন, একটি টেস্ট রিপোর্ট দেখে তার মনে হয়েছে করোনা ভাইরাস গোত্রের কোনো জীবাণুই এই অসুস্থতার কারণ৷ ২০০৩ সালে চীন সহ গোটা বিশ্বে যার জেরে জটিল শ্বাসকষ্ট জনিত অসুস্থতার কারণে মোট ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তিনি বন্ধুদের লেখেন, তারা যেন প্রিয়জনদের সাবধানে রাখেন৷ কিন্তু তার এই মেসেজ কিছুক্ষণের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়৷ ছড়িয়ে পড়ে স্ক্রিনশট৷ এমন কি, ওই চিকিৎসকদের নাম দিয়েই ছড়িয়ে পড়ে তার লেখা সমস্ত মেসেজ৷

সিএনএন-কে পরে লি বলেন, ‘আমি যখন এই মেসেজগুলো ছড়িয়ে পড়তে দেখি, তখনই বুঝতে পারি যে বিষয়টি হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে এবং সম্ভবত আমাকে শাস্তি পেতে হবে৷’ এর পরই গুজব ছড়ানোর অভিযোগে লি-কে অভিযুক্ত করে উহান পুলিশ৷ করোনা সংক্রমণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করার জন্য লি সহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে নিশানা করে চীনের পুলিশ৷

কিন্তু করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে লি-এর মৃত্যুর পরই চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে৷ রোগের প্রাদুর্ভাব, শিল্প ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, আর্থিক তছরূপ, প্রতিবাদী এবং স্বাধীনমনস্ক সাংবাদিকদের শাস্তি দেওয়ার মতো ঘটনার তথ্য চাপা দেওয়ার যে অভিযোগ চীন সরকার এবং তাঁদের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে বার বার ওঠে, তা আরো একবার প্রমাণিত হয়৷

যদিও লি-এর মৃত্যুর পরই ব্যতিক্রমী পথে হেঁটে ওই চিকিৎসককে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে ভুল স্বীকার করে নেয় চীন সরকার৷ সাধারণত চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা কোনো অভিযোগই সহজে স্বীকার করে না৷