একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে গতকাল রবিবার মধ্যরাত থেকে সশস্ত্রবাহিনী দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। ৩৮৯ উপজেলায় সেনাবাহিনী এবং ১৮ উপজেলায় নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ৮৭ উপজেলায় থাকবে বিজিবি।
সশস্ত্রবাহিনী আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পরও ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। বিভিন্ন জেলা শহর ও উপজেলা শহরগুলোয় সেনা সদস্যদের অগ্রবর্তীদল কোথায় থাকবেন, কোথায় ক্যাম্প করবেন তা পরিদর্শন করেছেন। এ দায়িত্ব পালনের ব্যয় হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কাছে সশস্ত্র বাহিনী গতকালই ৬০ কোটি টাকা পাঠিয়েছে।
এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী পাঁচ বছর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চাইতে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলেই নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অনেকেরই ধারণা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়নে করা হয়েছিল ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩০ ধারায়। আর এবারে মোতায়েন হচ্ছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ইন্সট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু দ্যা সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী কাজ করবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। তারা মূলত জেলা, উপজেলা ও মহানগর এলাকার সংযোগ স্থলে (নডাল পয়েন্ট) অবস্থান করবেন, প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। গত ১৯ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা এ সংক্রান্ত পরিপত্রে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পূর্বে, ভোট গ্রহণের দিন ও পরে আইন ও শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত স্বস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচন কমিশন/অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করবে।
সশস্ত্র বাহিনীর এ মোতায়েন ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ প্রতিটি জেলা/উপজেলা/মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে টহল ও অন্যান্য আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। উপকূলীয় ১৮টি উপজেলা ও সীমান্তবর্তী ৮৭টি উপজেলা ব্যতীত অন্যান্য সকল এলাকায় (৩৮৯টি উপজেলায়) সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। উপকূলীয় ১৮টি উপজেলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং সীমান্তবর্তী ৮৭টি উপজেলায় বিজিবি (অন্যান্য দায়িত্বপূর্ণ এলাকার পাশাপাশি) কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী কর্তৃক জরুরী প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমান নির্বাচনী সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রস্তুত রাখা হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন অনুযায়ী/নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়কসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন সেল স্থাপন করা হয়েছে।
প্রথমবারের মত জাতীয় সংসদের ৬টি আসনের (রংপুর-৩, খুলনা-২, সাতক্ষীরা-২, ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩ এবং চট্টগ্রাম-৯ আসনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে দুই পর্যায়ে ইভিএম এর উপর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করা হয়েছে এবং তৃতীয় পর্যায়ে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক জনসচেতনতা ও প্রচারণা কার্যক্রমে ইভিএম-এর উপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ কারিগরী হিসেবে অংশগ্রহণ করছে। ৬টি নির্বাচনী আসনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় কারিগরী সহায়তা প্রদানের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে ০৩ জন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও উক্ত আসনসমূহের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ের ইভিএম সংক্রান্ত কারিগরী সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য প্রস্তুত থাকবে।
গতকাল মধ্যরাত থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। রিটার্নিং কর্মকর্তা সহায়তা চাইলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বা ভোট গণনা কক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন অনুযায়ী/নির্দেশক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনে ইসির কাজে যাবতীয় সহায়তা দেবে।
অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে সশস্ত্র বাহিনীকে ডাকা হলে, তারা ফৌজদারী কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারা অনুযায়ী কাজ করবে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো উপায়ে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করা না গেলে ঘটনাস্থলে থাকা সর্বোচ্চ পদের ম্যাজিস্ট্রেট সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিতে পারেন। জরুরি পরিস্থিতিতে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে কমিশনড অফিসার সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিতে পারবেন। সামরিক শক্তি প্রয়োগের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে লিখিত নির্দেশ দেয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও মৌখিক নির্দেশ দেয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব তা লিখিত আকারে দেবেন।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, উপকূলবর্তী এলাকায় নৌবাহিনী প্রয়োজন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে। ঝুঁকির বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে সমন্বয় করে কমবেশি করা যাবে। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা সদস্য সংরক্ষিত হিসেবে মোতায়েন থাকবে।
ইসি সূত্র জানায়, এ দায়িত্ব পালনের ব্যয় হিসেবে কমিশনের কাছে সশস্ত্র বাহিনী চাহিদা রয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। এ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল অগ্রীম দেয়া হয়েছে ৬০ কোটি টাকা।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি আসনে চারটি করে টিম থাকবে। প্রতি দুইটি টিম একসাথে মুভ করবে। প্রতি টিমে একটি গাড়ি এবং ১০ থেকে ১২জন সেনা সদস্য থাকবে।