করোনার টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন বিশ্বের একাধিক দেশের শতাধিক বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। প্রতিষেধক ছাড়া করোনাভাইরাসকে রোখা প্রায় অসম্ভব! এ কথা উদ্বেগের সঙ্গ জানিয়েছে খোদ রাষ্ট্রসঙ্ঘ। করোনা মোকাবিলায় প্রায় ১০০টি প্রতিষেধকের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। এরই মধ্যে ভাল খবর শোনালেন রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা। আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে করোনার বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী ওষুধ! করোনা আক্রান্তদের উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে এই ওষুধে আশাতীত সাফল্য মিলেছে। তাই ১১ জুন থেকেই করোনার চিকিৎসায় এই ওষুধের প্রয়োগ শুরু করছে রাশিয়া। এ কথা জানিয়েছে রুশ সংবাদ সংস্থা ‘তাস’ এবং ব্রিটিশ সংস্থা রয়টার্স।
‘অ্যাভিফ্যাভির’ (Avifavir) নামে এই ওষুধের পেটেন্ট পেয়েছে রুশ ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা। রুশ বিজ্ঞানীদের দাবি, করোনা রোগীদের উপর এই ‘অ্যাভিফ্যাভির’ প্রয়োগের চার দিন পর ৬৫ শতাংশ রোগীর শরীরেই ভাইরাস সম্পূর্ণ নির্মূল হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র চার দিনের মধ্যেই ‘অ্যাভিফ্যাভির’ ৬৫ শতাংশ করোনা রোগীকে সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলেছে বলেই দাবি করেছেন রুশ বিজ্ঞানীরা। জানা গিয়েছে, দেশের করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘অ্যাভিফ্যাভির’-এর প্রয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রক। এই ওষুধের প্রথম ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্র্যায়ালে অপ্রত্যাশিত সাফল্য মিলেছে বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের।
চীনের উহান থেকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বের দু’শ ১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। বিশ্বের ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার চারশ ৫২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যুবরণ করেছেন তিন লাখ ৭৭ হাজার নয়শ ৭১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৯ লাখ ২৬ হাজার নয়শ ৩২ জন। এখনো এই ভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধ উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়নি। তবে করোনা ঠেকাতে নানা গবেষণা চলছে। পরীক্ষাধীন ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও শুরু করেছে কিছু দেশ। তবে রাশিয়াই প্রথম আগামী সপ্তাহ থেকে রোগীদের পরীক্ষাকৃত ওষুধ দিতে শুরু করবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনও পেয়ে গেছেন তারা।
অ্যান্টিভাইরাল ওষুধটির নাম রাখা হয়েছে ‘আভিফাভিয়ার’। ১১ জুন থেকে রোগীদের এই ওষুধ দেওয়া যেতে পারে বলে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাসে ৬০ হাজার জনকে ওই ওষুধের জোগান দিতে পারবে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা।
এই মুহূর্তে কভিড-১৯ রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ‘গিলিড’র ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ আশার আলো দেখাচ্ছে। কিন্তু সার্বিকভাবে ব্যবহারের ছাড়পত্র পায়নি। সামান্য কিছু দেশে অল্পসংখ্যক রোগীকে ওষুধটি দেওয়া হয়েছিল। সবাই সমান ফলও পাননি। এরই মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চ্যাডক্স-১’ নামে একটি প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীদের দাবি, তাদের প্রতিষেধক সাফল্য পাবে। কিন্তু সে সব শেষ হতে দেরি আছে।
‘আভিফাভিয়ার’ ওষুধটির জেনেরিক নাম ‘ফাভিপিরাভিয়ার’। ১৯৯০-এর শেষের দিকে সেটি তৈরি করে জাপানের একটি সংস্থা। আরএনএ ভাইরাস প্রতিরোধে ভালো কাজ দেয় ওষুধটি। ‘রাশিয়ান ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড’র প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানিয়েছেন, ‘ফাভিপিরাভিয়ার’র ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে নতুন ওষুধটি তৈরি করা হয়েছে। এর গুণাগুণ কী বাড়ানো হয়েছে, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে তা প্রকাশ করবে মস্কো।
জাপানেও এই ওষুধটির প্রয়োগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সেখানে এর নাম ‘আভিগান’। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এক প্রকার অনুমোদনও দিয়ে ফেলেছেন। এই খাতে ১২ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার সরকারি তহবিল থেকেও দিয়েছেন। কিন্তু রোগীদের ওপর প্রয়োগের ছাড়পত্র এখনো মেলেনি।
সূত্র: ওয়ার্ল্ডোমিটার, গল্ফনিউজ, আনন্দবাজার।