পূজামন্ডপে হামলার প্রতিবাদে নগরীতে প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ সমাবেশ

“গতকাল  জেএমসেন হলের পূজামন্ডপে সাম্প্রদায়িক হামলা রোধ করতে প্রশাসন কেন ব্যর্থ হলো,তার তদন্ত করতে হবে।দেশে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির গভীর চক্রান্ত চলছে।এবং তার নির্মম বলি হচ্ছেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগণ। কুমিল্লার পূজামন্ডপে প্রতিমার পায়ের কাছে মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরান  রেখে দিয়ে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি ও বিভিন্ন পূজামন্ডপে হামলা পরিকল্পিত।পরিকল্পিতভাবে কোরান অবমাননার ইস্যু সৃষ্টিকারী মহলকে নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ঘটনার সূত্র ধরে একের পর এক পূজামন্ডপ,মন্দির,হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা,হত্যা,অগ্নিসংযোগ,লুটতরাজ চরম ন্যাক্কারজনক। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ দুটোকেই যে আজ চরম সাম্প্রদায়িকতা গ্রাস করেছে,তা স্পষ্ট।এ হামলা প্রতিরোধ করা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির,পূজামন্ডপ,ঘরবাড়ি,জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।অবিলম্বে সারাদেশে পূজামন্ডপে হামলাকারী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।“

চট্টগ্রাম,কুমিল্লাসহ সারাদেশে পূজামন্ডপে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে নগরীতে আজ “সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ” এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন। সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড অশোক সাহার  সভাপতিত্বে আজ বিকাল ৪ টায় নগরীর আন্দরকিল্লাহ মোড়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ মাহফুজুর রহমান,গণমুক্তি ইউনিয়ন জেলা সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম,গণঅধিকার চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি মশিউর রহমান খান, গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি,জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল জেলা সাধারণ সম্পাদক আমির আব্বাস তাপু,বামজোটের জেলা সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা মহিনউদ্দিন, বাসদ(মার্কসবাদী) জেলা সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদ,বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা নেতা সত্যজিৎ বিশ্বাস,সাবেক কাউন্সিলর জান্নাতুল ফেরদাউস পপি,গণতান্ত্রিক আইনজীবি সমিতির নেতা এড জহিরউদ্দিন মাহমুদ,কবি ও সাংবাদিক সৈকত দে,অগ্নিবীণা পাঠাগারের সংগঠক জাহেদ আহমেদ।

বক্তারা বলেন,”কারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পূজামন্ডপে কোরান রেখেছে ও কারা সাম্প্রদায়িক আক্রমণের উস্কানি দিয়েছে – তাদের চিহ্নিত ও উন্মোচন করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু অনির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতার কথা বললেও ক্ষমতার স্বার্থে তারা নানাভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, কখনো আঁতাত ও ব্যবহার করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণে নেতৃত্বদানকারীদের দলীয় নমিনেশন দেয়া, হেফাজতে ইসলামের সাথে সখ্যতা,পাঠ্যপুস্তক সাম্প্রদায়িকীকরণ,এ সরকারের আমলে সংঘটিত অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়া ইত্যাদি এর প্রমাণ। ফলে এ গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে না পারলে অতীতের মত বর্তমান ঘটনারও সুষ্ঠু তদন্ত-বিচার অনিশ্চিত। আমরা দাবি জানাই – সরকারী তদন্তের পাশাপশি এধরণের সাম্প্রদায়িক সহিংসতাগুলো নিরপেক্ষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে গঠিত কমিশন দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে।“

সাম্প্রদায়িক  বিভেদ সৃষ্টির  এ চক্রান্ত নির্মূল করার জন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল গণতন্ত্রমণা মানুষকে আজ  ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।“

নেতৃবৃন্দ কোন প্রকার পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক উস্কানিতে উত্তেজিত না হয়ে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহিষ্ণুতা রক্ষা করার জন্য সকল ধর্মপ্রাণ ও গণতন্ত্রমনা জনসাধারণের প্রতি  আবেদন জানান।

সভা শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল আন্দরকিল্লাহ  থেকে শুরু হয়ে লালদীঘি, শহীদমিনার হয়ে নিউমার্কেট চত্বরে এসে সমাপ্ত হয়।