মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করেছে

শাওন ইমতিয়াজ ও ইউনুস মিয়া:: শুক্রবার (২২ মে) সকাল থেকে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করেছে।
দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহে ব্যস্ত ডিম সংগ্রহকারীরা। গত কয়েক দিনের বর্ষণের কারণে হালদা নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে প্রথমে নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। এরপরই নৌকা, জাল নিয়ে হালদা নদীতে ডিমের অপেক্ষা করতে থাকে তিন শতাধিক ডিম সংগ্রহকারী। ঠিক সকাল সাড়ে সাতটায় মা মাছ ডিম ছাড়ার পর তা সংগ্রহ শুরু করা হয়।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলার প্রায় ৯০ কিলোমিটার ‍দীর্ঘ এলাকাজুড়ে আছে এ হালদা নদী। উক্ত তিন উপজেলার মধ্যে রাউজান ও হাটহাজারী অংশে হালদা নদীর সত্তার ঘাট, অংকুরী ঘোনা, মদুনা ঘাট, মদুনাঘাট, গড়দুয়ারা, কান্তার আলী চৌধুরী ঘাট, নাপিতের ঘোনা ও মার্দাশা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছেড়েছে। আর ডিম সংগ্রহকে কেন্দ্র করে হালদা নদী পাড়ে বসেছে হাজার হাজার মানুষের মিলনমেলা। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও আছেন তাদের সঙ্গে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার পর জোয়ারের সময় রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মাছ নমুনা ডিম ছাড়ে। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী ও মৎস্যজীবীরা এই ডিম সংগ্রহ করেছেন। মা মাছ প্রাথমিকভাবে কিছু ডিম ছেড়ে নদীতে ডিম ছাড়া পরিবেশ পরীক্ষা করে দেখে। এরপরই পরিবেশ, প্রতিবেশ ও পানির গুণাগুণের প্যারামিটারগুলো ঠিকঠাক থাকলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। শুক্রবার সকাল থেকে হালদার বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম পাচ্ছেন সংগ্রহকারীরা।’ বলেন, ‘সাধারণত পূর্ণিমা বা অমাবস্যার তিথিতে ভারি বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল নামলেই মা মাছ ডিম ছাড়ে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানিয়েছেন, সংগ্রহ করা ডিম থেকে রেণু ফোটানো হবে। পরিচর্যার মধ্য দিয়ে সেই ডিম থেকে পোনা হবে। ডিম ফোটানোর জন্য তিনটি হ্যাচারি ও ৬০টি কুয়া প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে আরও কুয়া প্রস্তুত আছে। তিনি আরো জানান, ডিম আহরণ অব্যাহত আছে । আহরিত ডিমের পরিমান এবার কত হবে তা সন্ধ্যা নাগাদ জানা যাবে।


উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন বলেন, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভালো পরিমাণে ডিম এবার সংগ্রহ হচ্ছে।’ এবার ডিম ছাড়ার পরিমান বেশী। সকালের ছেয়ে দুপুরে আরো বেশী পরিমান ডিম আহরণ করা হচ্ছে বলে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন দৈনিক প্রিয় চট্টগ্রামকে জানান। তবে এবার অমাবস্যা তিথি থাকলেও বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢল ছাড়াই মা মাছ ডিম ছেড়ে দিয়েছে। প্রথমে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। সকালে পূর্ণমাত্রায় ছেড়ে দেয়া হয়।‘হালদাকে মা মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা সারাবছর অভিযান পরিচালনা করেছি। ১০৯টি অভিযান চালিয়ে ১ লাখ মিটারের বেশি জাল জব্দ করেছি। ৯টি ড্রেজার ধ্বংস করেছি। ডিম সংগ্রহেও আমরা জেলেদের সর্বোচ্চ সহায়তা দিবো। ডিম ফুটানোর জন্য তিনটি হ্যাচারি এবং ৬০টি কুয়া তৈরি করা হয়েছে।’

হালদা পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম তুহিন জানিয়েছেন, সাধারণত বজ্রসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সাধারণত মা মাছগুলো ডিম ছাড়ে। বুধবার রাতে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ ছিল। কিন্তু এদিন মা মাছগুলো ডিম ছাড়েনি। বৃহস্পতিবার রাতে সামান্য কিছু নমুনা ডিম ছেড়েছে। এরপর সকাল থেকে আমরা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ডিম পাচ্ছি। মনে হয় মা মাছ ডিম ছাড়া শুরু করেছে।

এর আগে, ২০১৯ সালে প্রায় ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল হালদা থেকে। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি। মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতি বছর হালদা নদীর এ মৎস্য প্রজনন খাতে রাজস্ব পাওয়া যায় ৮’শ কোটি টাকা।

ছবি: পার্থ প্রতিম বিশ্বাস, তরিকুল ইসলাম তুহিন, রুহুল আমিন ও নিজস্ব আলোকচিত্রী