মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম সুহৃদের আয়োজনে আজকের এই আলোচনা সভায় উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আলোচনার সূচনা হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন—যে দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। এই বিজয় শুধু অতীতের গৌরব নয়, এটি আমাদের বর্তমানের দায়িত্ব ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারই আজকের এই আলোচনা সভার মূল উদ্দেশ্য।
”মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মানে কেবল স্মরণ নয়—ন্যায়, গণতন্ত্র ও মানবিকতার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান “ মহান বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে চট্টগ্রাম সুহৃদ সভাপতি লেখক-সাংবাদিকও সংগঠক মির্জা
ইমতিয়াজ শাওন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় দিন।
১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদা। এই বিজয় কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়; এটি দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা, ত্যাগ ও আত্মদানের ফল। বিজয়ের ইতিহাস আমাদের সাহস দেয়, পথ দেখায় এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আমাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক ও সংগঠক সৈকত শুভ্র এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কেবল একটি ঐতিহাসিক স্মৃতি নয়—
এটি ন্যায়, সাম্য, মানবিকতা ও গণতন্ত্রের দর্শন। আজকের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই চেতনা কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটি আমাদের আত্মসমালোচনার বিষয়। বিজয় দিবসে আমাদের দায়িত্ব হলো—এই চেতনাকে কথায় নয়, কাজে প্রতিষ্ঠিত করা।
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক ও সাংবাদিক জাহেদ কায়সার এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য নাম। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা, অস্ত্র ও প্রতিরোধের কেন্দ্র হিসেবে চট্টগ্রামের ভূমিকা ছিল সাহসিকতা ও নেতৃত্বের প্রতীক। এই শহরের মানুষ বরাবরই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রাম সুহৃদের আয়োজন সেই ঐতিহ্যেরই ধারাবাহিকতা।
নাগরিক সমাজ ও চট্টগ্রাম সুহৃদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক ও সংগঠক আলী রশিদ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সুহৃদ একটি দায়িত্বশীল নাগরিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
আজকের এই আলোচনা সভা প্রমাণ করে—নাগরিক সমাজ চাইলে সমাজ পরিবর্তনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তরুণ প্রজন্ম ও বিজয়ের চেতনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক ও সংগঠক এম কামাল এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫ দশকের বেশি সময় পেরিয়ে আমরা আজ এক নতুন প্রজন্মের সামনে দাঁড়িয়ে।
তরুণদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বিজয়ের তাৎপর্য স্পষ্টভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বিভ্রান্তি নয়—সঠিক ইতিহাস ও মূল্যবোধ দিয়েই একটি শক্তিশালী ভবিষ্যৎ নির্মাণ সম্ভব।
গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবিক রাষ্ট্র গঠন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক ও কবি মিজান মনির এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিজয়ের মূল লক্ষ্য ছিল একটি শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রশ্ন করতে হবে—গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার কতটা সুসংহত হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজাই বিজয় দিবসের প্রকৃত চর্চা।
অঙ্গীকার ও ভবিষ্যতের প্রত্যয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক ও কবি অভিলাষ মাহমুদ এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবসে আমরা অঙ্গীকার করি—শহীদদের রক্তের সঙ্গে কোনো আপস নয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি মানবিক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য। চট্টগ্রাম সুহৃদের মতো সংগঠনের নেতৃত্বে এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন আরও বেগবান হবে—এই প্রত্যাশাই আজকের আলোচনা সভার মূল বার্তা।











