ফুটবল গোলের খেলা। গোল করতে না পারলে ভালো খেলার কোনও মূল্যই থাকে না।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের অবস্থা হয়েছিলে অনেকটা সে রকমই। হামজা চৌধুরীর খেলা সবার নজর কাড়লেও বাংলাদেশ দল জিততে পারেনি। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে একের পর এক গোল মিস করে শেষ পর্যন্ত গোলশূল্য ড্র হয়েছে ম্যাচটি।
এ ম্যাচ দিয়ে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার হামজা চৌধুরীর। ম্যাচজুড়ে নিজের মান তিনি ভালোভাবেই প্রমাণ করেছে ছেড়েছেন। তবে হামজা চৌধুরী মূলত: একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। তার কাজ গোল করা নয়। আর বাংলাদেশের মূল সমস্যাটাই হলো এই গোল করায়। যে জায়গাটায় হামজা যুক্ত হওয়ার পরও কোনো উন্নতি হলো না। কারণ রাকিব হোসেন, ফয়সাল আহমেদ ফাহিমরা যে আগের মতোই গল্প লিখলেন। তবে ভারতের মাঠে এক পয়েন্ট আদায়ের মাধ্যমে এশিয়ান বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে নিজেদের মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ।
অবসর ভেঙে ফেরা ভারতের সুনীল ছেত্রী বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ের কারণ ছিলেন। মঙ্গলবার শেষ দিকে তাকে তুলে নেন ভারত কোচ। তার আগ পর্যন্ত বার দুয়েক তিনি সুযোগ তৈরি করেছেন। তবে খুব যে হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছিলেন তিনি, বিষয়টি এমন নয়। তাকে ভালোই আটকাতে পেরেছে হামজা চৌধুরীরা। তবে ভালো খেলেছেন ভারতের লিস্টন কোলাস। তাকে সামলাতে বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশের রক্ষণকে।
ম্যাচের প্রথম মিনিটেই কুড়িয়ে পাওয়া এক সুযোগ নষ্ট করে বসে বাংলাদেশ। ভারতের গোলরক্ষক বিশাল কাইথ অমার্জনীয় এক ভুল করে বসেন। কিন্তু সেই ভুলের খেসারত তাকে দিতে হয়নি মজিবর রহমান জনির ব্যর্থতায়। সফরকারীদের আক্রমণের শুরুটা হয় কিক অফের বাঁশি বাজতেই। শাহরিয়ার ইমন বল বাড়িয়ে দেন হামজা চৌধুরীর উদ্দেশে। ম্যাচের দ্বিতীয় স্পর্শটাই হয় অভিষিক্ত হামজার। তিনি লম্বা করে বল বাড়ান মজিবর রহমান জনির উদ্দেশ্যে। জনি ঠিকঠাকভাবে বলটা নিজের কাছে নিতে পারেনি। কিন্তু বিশাল কাইথ তার পায়ে বল তুলে দেন। জনির সামনে তখন বিশাল ছাড়া কেউ নেই। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারননি জনি। এই মিডফিল্ডারের নেওয়া শট কাছের পোস্টের বাইরে দিয়ে জালে আঘাত হানে।
১১ মিনিটে কর্নার পায় বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম কর্নার ছিল সেটি। সেই কর্ণার নিতে আসেন হামজা চৌধুরী। একেবারে মাপা কিক নেন তিনি। যার মাধ্যমে নিজের ক্লাস বুঝিয়ে দেন ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলে খেলা এই ফুটবলার। তার নেওয়া কর্নার থেকে উড়ে আসা বলটি ভারত গোলকিপার বিশাল লাফিয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। কিন্তু সতীর্থকে বল দিতে গিয়ে এ দফায়ও গরমিল করে বসেন তিনি। বাংলাদেশ তো এই সুযোগে প্রায় গোল পেয়েই গিয়েছিল। মোহাম্মদ হৃদয়ের নেওয়া শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের বাঁচান ডিফেন্ডার শুভাশিস বসু। ৬ মিনিট পর শেখ মোরছালিনের ক্রস থেকে আরও একটি ভালো সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু ভারতের বক্সের ভেতর তপু ও ইমনের কেউ মাথা ছুঁয়াতে পারেননি। এই আক্রমণেরও মূল সূচনা হয় হামজার নেওয়া দ্বিতীয় কর্নার কিক থেকে।
২৩ মিনিটে লিস্টন কোলাস দারুণ এক ফ্রি কিকে বাংলাদেশের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেন। তপু বর্মনের বদলি নামা রহমত মিয়া কর্নারের বিনিময়ে দলকে রক্ষা করেন। ৩০ মিনিটে নিশ্চিত গোল থেকে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। উদান্তার হেড রুখে দেন মিতুল মার্মা। ফিরতি বলেও গোলের সুযোগ ছিল। কিন্তু ফারুখ হাজি ব্যর্থ হন। ৩৪ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে গোলের সুযোগ তৈরি করে ভারত। সাপোর্ট না পাওয়ায় গোল করতে পারেননি লিস্টন। ৩৭ মিনিটে ভারতের বক্সে ক্রস বাংলাদেশের রাকিব হোসেন বল ফেলেন। তবে সহজেই তা নিয়ন্ত্রণে নেন বিশাল। ৪০ মিনিটে বাংলাদেশের আক্রমণ রুখে বিশাল কাইথ ম্যাচে রাখেন নিজেদের। প্রথমার্ধে শেষ হয় এভাবেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে। দ্বিতীয়ার্ধেও গল্পটা ছিল প্রায় একই রকম। গোলের দেখা আর মেলেনি।
৪৬ মিনিটে আপুইয়া লিস্টনকে বক্সের মাঝে বল বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু সেই আক্রমণ রুখে দেন বাংলাদেশের মিতুল মারমা। ৪ মিনিট পর রাকিব হোসেনের শট জালে লাগে। প্রথমার্ধে দু-দুটি অমার্জনী ভুল করা বিশাল ৬০ মিনিটে ফের ভুল পাস দিয়ে বসেন। কিন্তু এ দফায়ও বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা ফায়দা তুলতে পারেনি।
দুই মিনিট পর লিস্টনের নেওয়া কর্নার থেকে উড়ে আসা বল পোস্টের উপর দিয়ে মারেন সুনীল। ৬৭ মিনিটে শুভাশিসের নেওয়া শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। ৭৩ মিনিটে ফের দৃশ্যপটে লিস্টন ও শুভাশিস। এ দফায় বাঁ দিক থেকে লিস্টনের কর্নারে হেড দেন শুভাশিস। কিন্তু গোলে রাখতে পারেননি। এই বা প্রান্ত থেকে লিস্টন ম্যাচজুড়েই ভয় ছড়িয়েছেন। ৮৪ মিনিটে সুনীল ছেত্রী তো ফাঁকা পোস্টেও হেডে বল জালে জড়াতে পারেননি।
প্রথমার্থের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে ভারতই ভালো খেলেছে। সুযোগ তৈরি করেছে তারাই বেশি। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের মতোই সমস্যা তাদের। গোল করার লোক নেই। সুনীল ছেত্রীকে এ কারণেই ফেরানো। কিন্তু কদিন আগে মালদ্বীপের বিপক্ষে ফেরার ম্যাচে ৯৫তম গোল পেলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে পারেননি।
এ ম্যাচে বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াকে মাঠেই নামাননি। তার বদলে আর্মব্যান্ড ছিল তপু বর্মনের হাতে। তবে তপু প্রথমার্ধের শুরুর দিকেই হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে মাঠ ছাড়েন। বদলি হিসেবে রহমত মিয়া মাঠে নামেন। ম্যাচ জুড়ে তার হাতেই ছিল আর্মব্যান্ড।