অস্থির পরিস্থিতিতে এ বছর নির্বাচন কঠিন হবে

    বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত একটি নির্বাচন নিয়ে রাজনীতিতে নানা জল্পনা। ঠিক এরই মাঝে অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেছেন, দেশে অস্থিরতা চলছে। এর মধ্যে এ বছর নির্বাচন কঠিন হতে পারে। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, নির্বাচন হতে পারে এ বছরের শেষের দিকে।
    ওদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, তরুণদের নেতৃত্বে নতুন এই দলটি জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেছেন, এখনও জননিরাপত্তা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করতে সক্ষম নয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ বছর জাতীয় নির্বাচন কঠিন হতে পারে।

    উল্লেখ্য, নাহিদ ইসলামের মতো ছাত্রদের গণ-আন্দোলনে গত বছর আগস্টে ক্ষমতা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তারপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকার এ মাসে বলেছে, অস্থিরতা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও এ বছরের শেষ নাগাদ হতে পারে জাতীয় নির্বাচন। এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত সাত মাসে আমরা সবাই আশা করেছিলাম যে স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশি ব্যবস্থা, আইন শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা হবে। এটা কিছুটা ঘটেছে। কিন্তু তা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়। ঢাকায় এনসিপির ২৬ বছর বয়সী প্রধান নাহিদ ইসলামকে সরকার একটি বাসা বরাদ্দ দিয়েছে। এরপর প্রথম সাক্ষাৎকারে তিনি রয়টার্সকে বলেন, বর্তমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং পুলিশি ব্যবস্থায় আমি মনে করি না যে একটি জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব। তিনি সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে পদত্যাগ করেছেন। এরপর এই প্রথম উল্লেখযোগ্য একজন রাজনীতিক হিসেবে প্রফেসর ইউনূসের নির্বাচনী সময়সীমা নিয়ে প্রথম সংশয় প্রকাশ করলেন। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ও তার ঘোর প্রতিপক্ষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে তরুণদের নতুন দল জাতীয় রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে। অন্য দলগুলো দ্রুত নির্বাচন দাবি করছে। তাদের যুক্তি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরে যাওয়া উচিত।

    ওদিকে হাসিনার সরকারের বিভিন্ন প্রতীকের ওপর হামলা, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষসহ অস্থিরতা আছে। বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ আছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এসব রিপোর্টকে অতিরঞ্জিত বলে অভিহিত করেছে। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে গত সপ্তাহে গঠিত হয়েছে এনসিপি। এ দলটি সম্পর্কে নাহিদ ইসলাম বলেন, যখনই নির্বাচন হবে তার জন্য প্রস্তুত থাকবে এনসিপি। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন হওয়ার আগে ‘প্রোক্লেমেশন অব দ্য জুলাই রেভ্যুলুশন’-এর বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছা গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই রেভ্যুলুশন হলো একটি সনদ, যা রাজনৈতিক দলগুলো এবং ছাত্র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শের পর তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বাংলাদেশের জনগণের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখা যাবে এবং গত বছর সহিংসতায় যে এক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তাদের প্রতি সম্মান জানানো হবে।

    অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, তারা জুলাই ঘোষণা প্রস্তুত করবে। এরপরই শিক্ষার্থীরা সংবিধান পরিবর্তনের আহ্বান থেকে সরে এসেছে। নাহিদ ইসলাম বলেন, যদি এক মাসের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারি তাহলে আমরা অবিলম্বে নির্বাচনের ডাক দিতে পারি। কিন্তু এ জন্য আরও সময় প্রয়োজন। তাই নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া উচিত। নাহিদ আরো বলেন, বাংলাদেশের অনেক ধনী ব্যক্তি দলটিতে (এনসিপি) অর্থায়ন করছেন। তিনি আরো বলেন, একটি নতুন অফিসের জন্য শিগগিরই তহবিল সংগ্রহ করা হবে এবং নির্বাচনের জন্য তহবিল সৃষ্টি করা হবে।