‘আইসিইউ থেকে হালদা নদীকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে’

দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী। প্রজনন মওসুমে রুই, কাতল, মৃগেল, কালিবাউশসহ মিঠা পানির সব মাছ ডিম দিতে অতিথি পাখির মতো হালদা নদীতে এসে ভিড় জমায়। হালদা নদীর পানি প্রজননের জন্য অধিক নিরাপদ বিধায় মৎস্য উৎপাদনে হালদা দেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার এবং পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার ভাটার নদী।

সোমবার (৩ মার্চ) মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ সন্মেলন কক্ষে খাগড়াছড়ি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. রাজু আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।

কিন্তু হালদা নদীর গুরুত্ব এখনও হালদাপাড়ের মানুষের কাছে অজানা। ফলে হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অংশীদারদের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালার আয়োজন করেছে মানিকছড়ি উপজেলা মৎস্য বিভাগ।

উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘বিশ্বের একমাত্র জোয়ার ভাটা ও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র নদী হালদা নদী। এ নদীর চরে তামাক চাষ, অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন, অবাধে পাহাড় কাটা ও বৃক্ষ নিধনের ফলে জাতীয় ঐতিহ্য (হেরিটেজ) হালদা নদীকে ইতোমধ্যে আইসিইউতে পাঠিয়েছি আমরা। আইসিইউ থেকে তাকে অবশ্যই বাঁচাতে হবে, হালদা নদীকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। বালি উত্তোলন, পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। তামাক চাষিরা বিকল্প চাষাবাদে সম্পৃক্ত হলে সরকারি প্রণোদনায় তারা অগ্রাধিকার পাবে।’

অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, হালদা নদী প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিনা আফরোজ ভূঁইয়া, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ও.সি) শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল, অংশীজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. এনামুল হক, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির মাওলানা মো. মনিরুজ্জামান, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান মো.মোশাররফ হোসেন, উপজেলা নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি এস.এম.জাহাঙ্গীর আলম, সাংবাদিক প্রতিনিধি আবদুল মান্নান, তামাক চাষি মো. কামাল হোসেন, মো. এরশাদ, মো. হান্নান মিয়া, মৎস্য চাষি মো. ফোরকান আলী প্রমুখ।

সমাপনী বক্তব্যে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. রাজু আহমেদ বলেন, ‘হালদা আমাদের জন্য প্রকৃতির নিয়ামত। এই নদী বিশ্বে নেই! এই নদীর মৎস্য পোনা লাখ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। এর ফলে দেশে মাছের চাহিদা পূরণে হালদার গুরুত্ব অপরিসীম। হালদার ওপর মানবসৃষ্ট দুর্বৃত্তায়নে আজ এই হেরিটেজকে আমরাই আইসিইউতে পাঠিয়েছি! এ থেকে উত্তরণের জন্য তামাক বিকল্প চাষাবাদ ও সচেতনতার বিকল্প নেই।’