রাউজানে ব্যবসায়ী হত্যার ১১ দিন পার: এখনও জড়িত কোন সন্ত্রাসী আটক হয়নি

শফিউল আলম, রাউজানঃ গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে রাউজানে শুরু হওয়া সন্ত্রাসীদের তান্ডব বন্ধ হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলির শব্দে মানুষের রাতের ঘুম হারাম হয়ে আছে।, হলদিয়া, নোয়াপাড়া, চিকদাইর, নোয়াজিশপুর,পূর্ব গুজরা, বাগোয়ান,কদলপুর, রাউজান পৌর এলাকার এলাকার জনসাধারণ বলেছেন তারা সন্ধ্যার পর গ্রামীণ রাস্তায় চলাচলে ভয় পাচ্ছে। দল উপদলে বিভক্ত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন এলাকায় ঘাঁটি করে থাকায় স্ব স্ব এলাকায় প্রতিপক্ষকে পাহারা দিতে সশস্ত্র অবস্থায় মহাড়ায় থাকে। এমন পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে প্রায় প্রতিদিন পরস্পরের বিরুদ্ধে বন্দুক যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। এসব ঘটনায় কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে।চলমান এমন পরিস্থিতির সর্বশেষ ঘটনায় মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার নোয়াপাড়ায় নিরাপরাধ এক ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমকে গুলি করে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় আরো দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ব্যব্সায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যাকান্ডের ১১ দিন অতিবাহিত হলে ও হত্যকান্ডের সাথে জড়িত কোন সন্ত্রাসীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি আইন শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা । ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যাকাণ্ডের ১০ দিন পর অজ্ঞাত আসামি করে অবশেষে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারী সোমবার বিকালে নিহত ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলমের বড় ছেলে মাকসুদ আলম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যাকাণ্ডের পর একটি সিসিটিভি ফুটেজ সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায় ১৩ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ড শেষে বীরদর্পে হেঁটে চলে যাচ্ছে। এলাকাবাসীরা এদের অনেককে চিনে থাকলেও ভয়ে-আতঙ্কে কেউ মুখ খুলেনি। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল।মামলায় অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনকে আসামী করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি (শুক্রবার) জুমার নামাজ আদায় ও বাবা-মায়ের কবর জেয়ারতের উদ্দেশ্যে নগরীর চান্দগাঁও বাসা হতে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের নিরামিষ পাড়া গ্রামের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেল যোগে মাকসুদ কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার আব্বাস উদ্দিনসহ রওনা দেন। আসার পথে বাড়ির অদূরে আসাদ আলী মাতব্বর পাড়া জামে মসজিদের সন্নিকটে পৌঁছালে সশস্ত্র সন্ত্রসীরা তাদের গতিপথ রোধ করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে তারা দুইজনই গুলিবিদ্ধ হন।সন্ত্রাসীরা চলে গেলে মুসল্লিরা তাদের উদ্ধার করে নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহাঙ্গীরকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলম এলাকার মৃত আবু ছৈয়দ মেম্বারের ১ম ছেলে। তিনি ছিলেন নগরীর চাক্তাইয়ের একজন প্রতিষ্ঠিত শুটকি ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল।মামলায় অজ্ঞাত ২৫-৩০ জনকে আসামী করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে এলাকাবাসী পথেরহাট বাজারে টানা দুইদিন মানববন্ধন করেন। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে আইনশৃংখলা বাহিনীসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নামেন।
রাউজানে প্রতিটি এলাকার সাধারন মানুষ চরম আতংকের মধ্যে জীবন যাপন করছেন বলে বর্ণনা করেছে। অনেকেই আরো বড় ধরণের সংঘাতের আশংকা করছে।

স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ এই উপজেলা দ্বিদ্বা বিভক্ত বিএনপি’র আধিপত্য বিস্তারের খেলায় পাঁচ আগস্ট থেকে এখান অরাজক পরিস্থিতি চলছে। উপজেলার সর্বত্র এখন ত্রাসের রাজত্ব চলমান রয়েছে। এলাকার জনসাধারণ সূত্রে জানা যায় গত ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে এই পর্যন্ত এই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তত অর্ধশতাধিক বার সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্নস্থানে সংঘটিত এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ এই পর্যন্ত আহত হয়েছে শতের কাছাকাছি। গুলিবিদ্ধসহ সংঘর্ষ সংঘাতে আহতদের মধ্যে রয়েছে নিরহ পথচারীরাও। কেউ কেউ পঙ্গুত্ব বরণও করেছে। সূত্র মতে রাউজানে বেশির ঘটনা ঘটছে পাহাড় ও কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে ভরাট কাজের ব্যবসা নিয়ে। আছে চাঁদাবাজির এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিয়েও। অভিযোগ রয়েছে এসব কাজে যারা জড়িত তারা সগৌরবে পরিচয় দিচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মী। জানা যায় এমন পরিচয়ধারীদের কেউ কেউ মোটা অংকে চাঁদাদাবি করে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলমান উন্নয়ন কাজে বাঁধা দিচ্ছে। এরকম অভিযোগ উঠেছে উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাই খালের উপর ব্রিজ নির্মাণ কাজেরও। স্থানীয় জনসাধারণ জানিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছে দেড় কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে ব্যর্থ হয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে গত প্রায় এক মাস আগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি কাজ ফেলে চলে গেছে। কদলপুর ইউনিয়নের জনসাধারণ সূত্রে জানা যায় সেখানে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে বেড়ায়। রাতে গুলি গোলার শব্দে এলাকার মানুষ ঘুমাতে পারে না। ওই এলাকায় পাহাড় কাটা মাটি বিক্রি নিয়ে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ মুখামুখি অবস্থানে রয়েছে। গত দুই মাসে একাধিকার বার পক্ষ বিপক্ষে গুলিগোলা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় কয়েকজন গুলিদ্ধিও হয়েছে। জানা যায় কদলপুরের সোমবাইজ্যাহাট ও নতোয়ানবাগিছা এলাকার বাসিন্দারা উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকে সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে অস্ত্রে মহড়া দেখে। গত কয়েকটি আগে নোয়াজিশপুর ফতেহ নগর এলাকায় বিএনপির এক গ্রুপ প্রতিপক্ষ গ্রুপের এক কর্মীকে গুলি করে আহত করেছে। এমন সংঘর্ষ সংঘাতের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে উপজেলার হলদিয়া, ডাবুয়া, বিনাজুরী, নোয়াপাড়া, বাগোয়ান, পাহাড়তলী, পুর্বগুজরাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে। বিএনপি আদর্শিক রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টরা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন রাউজানে চলমান ঘটনায় রাউজানের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে। স্বৈরচারের পতনের পর এমন অরাজক পরিবেশ কেউ আশা করেনি।কেউ কেউ বলেছেন আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর পর ১৭ বছর নির্বাসনে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা এলাকায় এসে দুই নেতার রাজনীতির বিভক্তির সুযোগ নিয়ে চাঁদাবাজীর সম্রাজ্য গড়তে দল উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তারা চাঁদাবাজীর পাশাপাশি বালু ও মাটির ব্যবসায় জড়িয়ে প্রতিটি এলাকায় অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এসব ঘটনায় আতংকিত অনেক পরিবার ছেলে মেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে ভয় পাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নিভয়ে ব্যবসা বানিজ্য করতে পাচ্ছে না। জানা যায় চলমান এই অরাজকতা পরিস্থিতির মধ্যে স্থানীয় দুই সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বিভিন্ন সভাসমাবেশে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বার বার সাবধান বাণী উচ্চারণ করে আসছেন।
দুই নেতাই দাবি করে আসছে যারা চাঁদাবাজী, সন্ত্রাস সংঘর্ষে লিপ্ত তাদের সাথে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নাই। চলমান অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে রাউজান থানার ওসি’র সাথে কথা বললে তিনি জানান সন্ত্রাসী কর্মকান্ড যেখানে ঘটছে সেখানে পুলিশ যাচ্ছে। এসব ঘটনা প্রতিরোধে এলাকার মানুষের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে যায় না।