করোনা পরিস্থিতি বিএফইউজের সিদ্ধান্ত ও দাবি

দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে নানা বিষয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। একইভাবে করোনায় মৃত সংবাদকর্মীদের জন্য ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে সংগঠন দুটি। আজ শনিবার (৯ মে) সংগঠন দুটির জরুরি যৌথ সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যৌথ সভায় উভয় সংগঠনের নেতারা গণমাধ্যমের অগ্রগতি ও সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে বেশকিছু প্রস্তাব ও দাবি তুলে ধরেন এবং সভায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করায় সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর খোকন, মাহমুদুল হাকিম অপু, আসলাম রহমানের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভায় করোনার এই ভয়াবহ দুর্যোগের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা বলেন, এই কঠিন সময়ে সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মী ছাঁটাই ও বকেয়াসহ বেতন-ভাতা পরিশোধে গণমাধ্যম বিশ্বের সংবাদ মালিকরা ব্যর্থ হলে সাংবাদিক ইউনিয়ন কর্মবিরতি পালন ও ধর্মঘটের মতো কঠিন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।

ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিএফইউজের সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল মজিদ, নির্বাহী পরিষদ সদস্য শেখ মামুনুর রশিদ, নুরে জান্নাত আকতার সীমা, ডিইউজের সহ-সভাপতি এম এ কুদ্দুস, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান জিহাদ, প্রচার সম্পাদক আছাদুজ্জামান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক দুলাল খান, জনকল্যাণ সম্পাদক সোহেলী চৌধুরী, দফতর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস সোহেল, শাহানাজ পারভীন এলিস, রাজু হামিদ, ইব্রাহিম খলিল খোকন, সলিম উল্লাহ সেলিম প্রমুখ।

বিএফইউজের সভায় সিদ্ধান্ত ও দাবিগুলোঃ

১. করোনা মহামারির এই সময়ে প্রত্যেক গণমাধ্যম মালিককে কর্মরত সংবাদকর্মীদের স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. কোনো সংবাদকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার গণমাধ্যম মালিককে বহন করতে হবে এবং একই সাথে করোনা আক্রান্ত সংবাদকর্মীর পরিবারের দেখভালও করতে হবে।

৩. করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোনো সংবাদকর্মী মৃত্যুবরণ করলে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রয়াত সংবাদকর্মীর পরিবারকে নগদে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকা প্রদান করতে হবে।

৪. কোনো গণমাধ্যম মালিক করোনা মহামারির এই সময়ে কর্মরত সংবাদকর্মীদের সুরক্ষায় উপরোক্ত দায়িত্বগ্রহণ ও পালনে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষতিগ্রস্ত সংবাদকর্মীর পরিবারের সদস্যরা আদালতে মামলা দায়ের করলে ইউনিয়ন তাতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

৫. গণমাধ্যম মালিকদের সভার এসব সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ার জন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

৬. ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্তের আলোকে গণমাধ্যম মালিকরা লিখিত নোটিশ জারি করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সংবাদকর্মীদের সুরক্ষার উপরোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা না করলে সংবাদকর্মীরা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে যতটা সম্ভব দায়িত্ব পালন করবেন। এ জন্য কোনো সংবাদকর্মীর বেতন কর্তন, ছাঁটাই কিংবা হয়রানি করা যাবে না।

৭. সংবাদকর্মীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. এ ব্যাপারে প্রত্যেক ইউনিয়ন তার প্রতিটি ইউনিটকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বলবে। যেসব প্রতিষ্ঠানে ইউনিট নেই সেখানে ইউনিয়ন স্বীয় বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৯. পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই সংবাদকর্মীদের বকেয়াসহ চলতি মাসের বেতন ও উৎসব ভাতা প্রদান করতে হবে।

১০. কোনো গণমাধ্যম মালিক এর ব্যত্যয় ঘটালে সরকারকে সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন ও টেলিভিশনের প্রদত্ত লাইসেন্সের শর্তাবলির আলোকে ডিক্লারেশন ও লাইসেন্স বাতিল করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

১১. অন্যথায় ইউনিয়ন মনে করবে, সারাদেশের মেহনতি সংবাদকর্মীদের জীবন-জীবিকাকে চরম অনিশ্চিয়তার মুখে ঠেলে দেয়ায় সরকার গণমাধ্যম মালিকদের বহুমাত্রিক স্বার্থরক্ষায় সহযোগিতা করছে।

১২. সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর ঈদের পর উপযুক্ত সময়ে এফইসির সভা/ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা-পর্যালোচনা মূল্যায়নের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।