রাউজানে পাহাড়-টিলা-সমতলে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব

শফিউল আলম, সংবাদদাতা রাউজানঃ চট্টগ্রামের রাউজানে পাহাড়, টিলা কিংবা সমতল ভূমি এমন কোনো জায়গা বাকী নেই যন্ত্রতাণ্ডব চলছে না। সন্ধ্যা নেমে এলেই স্কেভেটর (খনন যন্ত্রের) শব্দ আর সারিবদ্ধ ট্রাকের আওয়াজে রাতের ঘুম হারাম স্থানীয়দের। আবার কোথাও কোথাও মাটি কাটা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ কিংবা কেউ সড়ক দিয়ে গাড়ি চালাচল বন্ধের চেষ্টা করলে ঘটছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। কোনো কোনো ঘটনায় মুহুর্মুহু মুহুর্মমুহু গুলি চালানো হচ্ছে। কখনো ঝাঝঁড়া হচ্ছে প্রতিপক্ষের পা কিংবা শরীরের অংশ। একদিকে যন্ত্রতাণ্ডবে কাতরাচ্ছে রাউজানের পাহাড়-পর্বত, টিলা কিংবা সমতল ভূমি।

অন্যদিকে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সংর্ঘষে আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন মাটি খেকোদের কেউ কেউ। এমন চিত্র রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ০৯টি ওয়ার্ডে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ০৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুর্থানের পর থেকে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেণীর দুষ্কৃতিকারী বেপরোয়াভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। এসব মাটি দ্বারা পুকুর, কৃষি জমি ভরাট করা হচ্ছে। শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ধারী নয়, ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়েও মাটি কাটার অভিযোগ অহরহ। তবে রাউজানে কোনো ধরনের ছাত্র আন্দোলন না হওয়ায় কোনো সমন্বয়ক না থাকায় কারো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি টিলাভূমি কেটে মাটি বিক্রি করা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও কৃষি জমি কেটে মাছের ঘের তৈরি করা হচ্ছে। টিলাভূমির বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ ওই এলাকার আবদুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি সিণ্ডিকেট মিলে ধারিচ্ছে টিলা নামক একটি টিলাভূমি কেটে মাটি বিক্রি করেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল কাদের বলেন, আমি কোনো টিলা কাটছি না, ইলিয়াছ কাটছে। হলদিয়া ইউনিয়নে দুটি টিলাভূমি কাটা হচ্ছে বলে দাবি তার। এদিকে ডাবুয়া ইউনিয়নের উত্তর আইলিখীল এলাকায়ও টিলাভূমি ও কৃষি জমি কেটে সাবার কর হচ্ছে। সেখানে বৃক্ষনিধনও চলছে। এছাড়া রাউজান সদর ইউনিয়ন, কদলপুর, পাহাড়তলী, পূর্বগুজরা, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নেও চলছে যন্ত্রতাণ্ডব। মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অনুমতি সাপেক্ষ মাটি কাটছি।’ সচেতন মহলের দাবি উপজেলাজুড়ে যন্ত্রতাণ্ডব চললেও প্রশাসন কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা উপজেলা প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অংছিং মারমা বলেন, ‘আমি নতুন আসছি, পাহাড় টিলাভূমি কাটার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো ধরনের অভিযোগ বা তথ্য পায়নি। তথ্য পেলেই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’