শফিউল আলম, রাউজানঃ চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফতেহ নগর, নদীম পুর, ইন্দিরা ঘাট, গহিরা ইউনিয়নের কাজী পাড়া, কোতোয়ালী ঘোনা, রাউজান পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বদুর ঘোনা, মঘাশাস্ত্রি বড়ুয়া পাড়া, অংকুরী ঘোনা, পশ্চিম গহিরা বড়ুয়া পাড়া, দক্ষিন গহিরা, মোবারক খীল জামতল, পশ্চিম বিনাজুরী, কাগতিয়া,কাসেম নগর, গোলজার পাড়া, আজিমের ঘাট, ডোমখালী, মগদাই, পশ্চিম আবুর খীল, খলিফার ঘোনা, উরকিরচর, মইশকরম, হারপাড়া, সার্কদা, মোকামী পাড়া, কচুখাইন, হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ, ধলই, লাঙ্গলমোড়া, ছিপাতলী, মেখল, মির্জাপুর, গুমানমর্দন, গড়দুয়ারা, মাদ্রাসা, দক্ষিন মার্দ্রাসা এলকায় হালদা নদীর তীরে ফসলী জমিতে শুস্ক মৌসুমে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করেন কৃষকরা ।
রাউজান হাটহাজারী উপজেলার হালদা নদীর তীরের ফসলী জমিতে অগ্রহায়ন মাসে কৃষকরা মরিচ চারা রোপন করেন। হালদা নদী থেকে সেচের মাধ্যমে পানি দিয়ে মরিচ ক্ষেত করেন কৃষকরা । হালদা নদীতে জেগে উঠা চরের মধ্যে ও মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করেন কৃষকরা । হালদা নদীর তীরের ফসলী জমি থেকে উৎপাদিত মরিচ অন্য এলাকার ফসলী জমি থেকে উৎপাদিত মরিচের চেয়ে কদর বেশী। সুস্বাদু রান্নার প্রধান উপাদান মসল্লা। মসল্লার প্রধান উপকরণ শুকনো মরিচ। হালদার পাড়ের লাল মরিচ এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হচ্ছে। হালদা পাড়ের লাল মরিচ রান্নার কাজে ব্যবহার করে সারা জাগানোর পর এবার প্রবাসীরা নিজের রান্নার কাজে ব্যবহার করার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। ভারত, পাকিস্তান শ্রীলঙ্কাসহ এমনকি সৌদি আরব এবং দুবাই পর্যন্ত হালদা নদীর তীরের ফসলী জমি থেকে উৎপাদিত মরিচের সুনাম রয়েছে। প্রবাসীরা দেশে ছুটি শেষ করে প্রবাসে যাওয়ার সময় তারা ব্যাপক পরিমাণ হালদা নদীর তীরের ফসলী জমি থেকে উৎপাদিত লাল মরিচ ক্রয় করে মরিচ রাইস মিলে গুঁড়ো করে নিয়ে যায়। এটি পাকিস্তান ভারত শ্রীলংকাসহ লন্ডন আমেরিকার লোকজনও পছন্দের মরিচ। হালদার লাল মরিচগুঁড়ো করে উন্নত মানের প্যকেট জাত করে বিক্রি করে বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতারা হাটহাজারী বাজার থেকে ক্রয় করে নিয়ে যায় পরে তারা মেশিনে প্যাকেটজাত করে।বিশেষ করে হাটহাজারির বিভিন্ন ইউনিয়ন হালদা নদীর চরে শত শত একর জমিতে চাষিরা মরিচ চাষ করে থাকে। মৌসুমীর প্রাকৃতিক অবস্থা ভালো থাকলে মরিচ চাষিরা প্রতি মৌসুমী ৭০ হাজার থেকে প্রায় এক লক্ষ টাকার উপরে পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করে থাকে। এই লাল মরিচ চাষের শুরুতে প্রায় বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকার মতো ব্যয় হলেও লাভ হয় তার দ্বিগুণ। সপ্তাহে দুইদিন হাটহাজারী নাজিরহাট কাটিরহাট বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বাজার বসে ব্যবসায়ীরা হাটহাজারীতে এসে পাইকারি মূল্য মরিচ কিনে নিয়ে যায়। রাউজানের হাট বাজারে ও হালদা নদীর তীরের ফসলী জমি থেকে উৎপাদিত মরিচ বিক্রয় করেন কৃষকরা । হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার অন্যান্য বাজারগুলোর চেয়ে হাটহাজারী বাজারে অতি শুলব মূল্য মরিচ পাওয়া যায়। তাই ত্রেতারা এই বাজারে আসে মরিচ ক্রয় করে পাশাপাশি বিক্রেতারাও বেশি মরিচ নিয়ে আসে বাজারে। জেলার বিভিন্ন এলাকার মরিচের চেয়ে হাটহাজারীর হালদা পাড়ের লাল মরিচ প্রায় প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বেশি চাহিদার কারণে এই মরিচের মূল্য বেশি বলে জানান ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।
হালদা নদীর তীরের ফসলী জমি থেকে উৎপাদিত মরিচ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। পাইকারি ক্রেতারা শত শত কেজি মরিচ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপের দেশের রফতানি করে থাকে। এই হালদা নদীর তীরের ফসলী জমি থেকে উৎপাদিত লাল মরিচ বিভিন্ন দেশে রফতানি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে থাকে। স্থানীয় কয়েকজন মরিচ চাষি সাথে কথা বলে জানা যায় মরিচ চাষের মৌসুমী জমিতে ভালো করে পরিচর্চা করে পর্যাপ্ত সারসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে এই মরিচ চাষ করা হয়। হালদা পাড়ের মরিচ বলে তাই এই মরিচ অন্যান্য জেলার মরিচ থেকে অত্যন্ত সুস্বাদু বলে ক্রেতারা ঝুকে পড়ে হালদা পাড়ের লাল মরিচের দিকে। হালদা পাড়ের মরিচ চাষি নুরুল আলমের সাথে সাথে কথা বলে জানা যায় আমাদের হালদা পাড়ের লাল মরিচ খুব সুস্বাদু ও জ্বাল মিষ্টি তাই সারা দেশ, বিদেশে সুনাম অর্জন রয়েছে। আমি গত বৎসর ৬০ শতক জমিতে চাষ করেছি খুবই ভালো হয়েছে মরিচ বিক্রি করেছি অনেক টাকার তবে এই চাষে সব মিলে খরচ হয়েছিলো ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এবৎসর ও ৮০ শতক জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করা করেছি । হাটহাজারী পুর্ব জেবরা মিঠাছড়ার কুল এলাকার বাসিন্দ্বা নজরুল ইসলাম সওদাগর বলেন, মিঠছড়া খালের পাড়ে ৮ শত জমিতে উন্নত জাতের মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করেছি। ৮শতক জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করতে ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে । মরিচ গাছে মরিচ ধরা হয়েছে । হাটহাজারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে হাটহাজারী উপজেলার হালদা নদীর তীরের ফসলী জমিতে প্রতিবছর ২২০ হেক্টর জমিতে হালদা মরিচ চাষ হয়। আবার হালদা নদীর বাইরেও ভালো মরিচ চাষ হয়ে থাকে তাও মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। হাটহাজারী বাজারে প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার বাজার বসে। এই দুইদিন দেশের বিভিন্ন জেলা হতে আগেভাগে মরিচ ক্রেতারা চলে আসে মরিচ কিনতে। রাউজান উপজেলা কৃষি অফিসার মাসুম কবির বলেন, রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় দুইশত ত্রিশ হেক্টর জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করেছে কৃষকরা। তার মধ্যে হালদা নদীর তীরের ১শত হেক্টর ফসলী জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করছে কৃষকরা । প্রতি হেক্টর মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ বাবদ খরচ হয় আটার হাজার পাঁচশত টাকা আগের তুলনায় একটু কম। প্রতি হেক্টর মরিচ ক্ষেতের ফলন থেকে কাচাঁ মরিচ উৎপাদন হয় পাচঁ মেট্রিক টন। উৎপাদিত কাচাঁ মরিচের বর্তমান বাজার মুল্য অনুসারে বিক্রয় করে দুই লক্ষ নব্বই হাজার টাকা আয় করেন। প্রতি হেক্টর মরিচ ক্ষেতের জমি থেকে শুকনা মরিচ উৎপাদিত হয় এক মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরের উৎপাদিত এক মেট্রিক টন শুকনা মরিচ বর্তমান বাজার মুল্য অনুসারে বিক্রয় করে কৃষকেরা তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা আয় করেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস জানায়।
রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের হালদা নদীর তীরের ফসলী জমিতে নদীমপুর এলাকার সফল কৃষক মুহাম্মদ শফি জানান, আমি নিজের ৩০ শতক জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করেছি। তিনি আরো বলেন ৩০ শতক জমিতে মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করতে তার খরচ হয়েছে চৌদ্দ হাজার পাঁচশত টাকা। কৃষক শফি তার মরিচ ক্ষেতের জমি থেকে ১০ থেকে ১৫ মন শূকনা মরিচ ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন। কৃষক শফি তার মরিচ ক্ষেত থেকে বর্তমান বাজার মুল্য অনুসারে এক থেকে দুই লক্ষ টাকা আয় করতে পারবে বলে আশা করেছেন।
উপজেলার হালদা নদীর তীরবর্তী ফসলী জমি ছাড়া ও বইজ্যাখালী খালের তীরবর্তী উরকিরচরের মিরাপাড়া, হারপাড়া, পশ্চিম নোয়াপাড়া, পটিয়া পাড়া, বদুমুন্সি পাড়া, কাটালভাঙ্গা খালের তীর বর্তী বদু মুন্সি পাড়া, মিরধার পাড়া, সাতবাড়িয়া, মনিকছড়ি খালের তীরবর্তী বড়ঠাকুর পাড়া, কাগতিয়া খালের তীরবর্তী মজিদা পাড়া, বিনাজুরী, জা¤ম্মইন, উত্তর গুজরা, মঙ্গলখালী, রাউজান খালের ও মূখছড়ি খালের তীরবর্তী পুর্ব রাউজান সমশের নগর, কেউটিয়া, জয়নগর বড়ুয়া পাড়া, রশিদা পাড়া, পশ্চিম রাউজান, হরিশখান পাড়া, খলিলাবাদ, ডাবুয়া খালের তীরবর্তী জানিপাথর, বৃকবানুপুর, গলাচিপা, ডাবুয়া, রামনাথ পাড়া, কেউকদাইর, চিকদাইর পাাঠান পাড়া, সুলতান পুর কাজী পাড়া,ইদিল পুর, পুর্ব গহিরা, সর্তা খালের তীরবর্তী রাউজানের হলদিয়া, গর্জনিয়া এয়াসিন নগর, উত্তর সর্তা, লাঠিছড়ি, গনিপাড়া, পশ্চিম ডাবুয়া, চিকদাইর, দক্ষিন সর্তা, ফতেহ নগর, গহিরা দলই নগর, মোগদা খালের তীরবর্তী চিকাদাইর, পশ্চিম সুলতান পুর, খাসখালী খালের তীরবর্তী রাউজানের হিংগলা, কলমপতি, দক্ষিন হিংগলা, সাপলঙ্গা, ঢেউয়া পাড়া, হাজী পাড়া, শরীফপাড়া, নন্দ মাঝিপাড়া, লেলেঙ্গারা, বেরুলিয়া খালের তীরবর্তী ছত্রপাড়া, সুলতানপুর ছিটিয়া পাড়া, হরনাথ ছড়া খালের তীরবর্তী কদলপুর ভোমর ঢালা খালের তীরবর্তী পুর্ব রাউজান, ভোমর পাড়া, এলাকার ফসলী জমিতে শুস্ক শীত মৌসুমে এলাকার কৃষকেরা মরিচ ক্ষেতের চাষাবাদ করেন।
এলাকার কৃষকেরা জানিয়েছেন গেল বৎসরের তুলনায় এ বৎসর মরিচ ক্ষেতে মরিচ চারা রোপনের পর থেকে আবহাওয়া অনুকুলে রয়েছে । আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে মরিচের ফলন ভাল হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা