শফিউল আলম, রাউজান: চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় প্রতিদিন সন্দ্ব্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত সময়ে চলছে পাহাড় টিলা কাটার মহোৎসব। একই ভাবে রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। মাটি খেকোরা সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত ভেকু দিয়ে নির্বিচারে পাহাড় টিলা কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করছে। পাহাড় কাটার অধিকাংশ মাটি যাচ্ছে রাউজানের বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি ও পুকুর জলাশয় ভরাট কাজে।সরেজমিনে দেখা গেছে, রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের বানারস, বৃন্দ্বাবনপুর, বৃকবানপুর, গলাচিপা, জানিপথর, উত্তর আইলী খীল, এয়াসিন নগর, হলদিয়া, ডাবুয়া ইউনিয়নের রাধামধব পুর, সুড়ঙ্গা, হিংগলা, মেলুয়া, সিংহরিয়া, রাউজান পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের জঙ্গল রাউজান, আইলী খীল দওয়াত খোলার পাশে, পুর্ব রাউজান, কাজী পাড়া, ঢালার মুখ, ৭ নং রাউজান ইউনিয়নের পূর্ব রাউজান, মুখছড়ি, রশিদ পাড়া, জয়নগর বড়ুয়া পাড়া, ভোমর ঢালা, রানী পাড়া, শমশের নগর, কদলপুর ইউনিয়নের কালকাতর পাড়া, শমশের পাড়া, দক্ষিন শমশের পাড়া, কদলার টিলা, হজরত আশরফ শাহ মাজারের পাশে, ভোমর পাড়া, দক্ষিন জয়নগর, পাহাড়তলী ইউনিয়নের উনসত্তর পাড়া, সন্দ্বিপ পাড়া, নাজিরের টিলা, দক্ষিন জয়নগর, জগৎপুর আশ্রম, মহামুনী বহলপুর, এলাকায় পাহাড় টিলা ও কৃষি জমি কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে মাটি খেকো প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্যরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁরা কৌশলে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পুরোদমে পাহাড় টিলা কাটে ড্রাম ট্রাকে মাটি ভর্তি করে রাউজানের বিভিন্ন স্থানে পুকুর জলাশয়, কৃষি জমি ভরাট কাজে নিয়ে যায়। এক ট্রাক লাল মাটি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা করে। পাহাড় টিলা ও কৃষি জমি কাটায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাটিখেকোরা।বেপরোয়া মাটি খেকোদের কিছু ঠেকানো যাচ্ছে না। কাটছে নির্বিচারে পাহাড় টিলা ও কৃষি জমি। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে।নিবর ভূমিকায় প্রশাসন।রাউজান পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ জায়গা পাহাড়ি এলাকা। এই এলাকায় প্রাকৃতিক ও সামাজিক বনায়নের গাছ-গাছরাসহ ছোট-বড় অর্ধশতাধিক টিলা রয়েছে। ওইসব টিলায় স্ব স্ব স্থানীয় মাটিখেকোদের চোখ পড়েছে। তারা নানা কৌশলে প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের হাত করে এসব এলাকার প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যের পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি বিক্রি ও সরবরাহ করছে। পাহাড়ের লাল মাটি দিয়ে পুকুর ও নিচু জমি ভরাট করা হচ্ছে। বিভিন্ন ফসল ও সবজি আবাদের নাম করে কিংবা বাড়িঘর নির্মাণের অজুহাতে ২০-৩০ ফুট উঁচু টিলা কেটে সমতলভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে।স্থানীয়রা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে পাহাড় ও টিলা কৃষি জমি থেকে মাটি খেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা নির্বিচারে পাহাড় টিলা কাটে। কৃষি জমি মাটি ও কাটেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাটি খোকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতারতি ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি নেতা কর্মীর পরিচয় দিয়ে নেতা কর্মীর পরিচয় দিয়ে কাটছে পাহাড় টিলা। রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দ্বারা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো বলেন, ছোট-বড় লাল মাটির অনেক পাহাড় ও টিলাসহ বন বিভাগের জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন।পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও সামাজিক বনায়নের গাছগুলোও কৌশলে কেটে বিক্রি করেন।
খবর নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মাটি মাটি খেকোরা দিনে-রাতে ভেকু মেশিন দিয়ে পাহাড় ও টিলার লাল মাটিসহ কৃষি জমি কেটে ভারি ভারি ড্রাম ট্রাকে পরিবহণ করে বিভিন্ন স্থানে কৃষি জমি, পুকুর জলাশয় ভরাটে বিক্রি করছেন।মাটি ভর্তি ভারি ড্রাম্প ট্রাক চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তা ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক বিনষ্ট হচ্ছে।রাউজান উপজেলায় কৃষি সুরক্ষা আইন ভঙ্গ করে প্রতি বছর শত শত বিঘা ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে।রাতের আধারে পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে কোথাও না কোথাও ভরাট করা হচ্ছে ফসলি জমি। গড়ে তোলা হচ্ছে বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।অনুমতি ছাড়াই জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলেছেন বহু মানুষ।অথচ ভূমি কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় ব্যবহারভিত্তিক শ্রেণি পরিবর্তন না করায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, উপজেলার হলদিয়া-ডাবুয়া ইউনিয়নের শহীদ জাফর সড়কের পাশে কৃষি জমি ভরাট করে বসতবাড়ি নির্মান করা হচ্ছে। এছাড়াও রাউজান সদর ইউনিয়নের পূর্ব রাউজান, পশ্চিম রাউজান জারুলতল, কদলপুর ইউনিয়নে মীর বাগিচা, ইউনিয়ন পরিষদের পাশে, চিকদাইর ইউনিয়নে নয়া রাস্তার পাশেসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি ভরাট করে পরিবর্তন করা হচ্ছে জমির শ্রেণি।
২০১৬ সালের কৃষিজমি সুরক্ষা আইনের (খসড়া আইন)-৪ ধারায় বলা রয়েছে, কৃষিজমি ভরাট করতে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এই আইনের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে ফসলি জমি ভরাট করা হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রামে ফসলি জমিতে মাটি করে বসতভিটা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতি বছরই এভাবে কমছে কৃষিজম। বছরের পর বছর এই অবস্থা চলে এলেও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না ভূমি কর্মকর্তারা।চট্টগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, অনুমতি ছাড়াই যারা পাহাড় টিলা কেটে পরিবেশ বিনষ্ট করছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদুয়ানুল ইসলাম বলেন,পাহাড়-টিলা কাটার অপরাধে কদলপুর এলাকায় আদালতের অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের জমিরানা করা হয়েছে।কেউ অনুমতি ছাড়াই পাহাড় টিলা কাটলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পূর্ব রাউজানে পাহাড়-টিলা কাটার খবর পেয়েছি, অভিযান পরিচালনা করা হবে। কৃষি জমি ভরাট বিষয়ে তিনি বলেন কৃষিজমি ভরাট করে বসতবাড়ি কিংবা অন্য কিছু করতে হলে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। কেউ না নিয়ে থাকলে অপরাধ হবে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হলে অবশ্যই খাজনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। ফসলি জমি ভরাটের খবর পেলেই অভিযান চালানো হবে।