মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত থেকে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে দেশ গড়ার আহ্বান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহাসমারোহে ও আনন্দঘন পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচি মাধ্যমে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করা হয়েছে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মৃতি সৌধ, শহীদ মিনার ও স্মৃতি সৌধ ‘স্মরণ’সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ ভবন দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। ১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২.০১ মিনিটে বিউগল বাজিয়ে বিজয় দিবসের সূচনা লগ্নকে স্বাগত জানানো হয়। ১৬ ডিসেম্বর ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মসজিদে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয় এবং সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৮ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যে পুস্পমাল্য অর্পণ করে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন সমাজ বিজ্ঞানী বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। অতঃপর পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চ.বি. মাননীয় উপ-উপাচার্য বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার, শিক্ষক সমিতি, অনুষদ সমূহের ডিনবৃন্দ, হলসমূহের প্রভোস্টবৃন্দ, সভাপতি-পরিচালক ফোরাম, অফিসার সমিতি, চ.বি. ক্লাব (ক্যাম্পাস), চ.বি. মহিলা সংসদ, সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চ.বি. ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন, সাংবাদিক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ। পুস্পমাল্য অর্পণ শেষে মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় র‌্যালি এবং র‌্যালি শেষে চ.বি. বঙ্গবন্ধু চত্বরে মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চ.বি. মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী এবং সভাপতিত্ব করেন মাননীয় উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর ভাষণে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলকে মহান বিজয় দিবসের বিজয়ী শুভেচ্ছা জানান। তিনি মহাকালের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, ‘৭৫ এ নির্মমভাবে শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। মাননীয় উপাচার্য ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দীপ্ত নেতৃত্ব এবং রাজনৈতিক দূরদর্শীতা আলোকপাত করে বলেন, বঙ্গবন্ধু বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত গণমানুষের মুক্তির দূত এবং বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। মাননীয় উপাচার্য আরও বলেন, সত্যকে কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না। তিনি বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলতে ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন প্রজন্মের কাছে যে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপনের মহাযজ্ঞ শুরু করেছিল, তারা তাতে সফল হয়নি, বরং আজ দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে সত্য উন্মোচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার সুযোগ্য-গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। মাননীয় উপাচার্য এই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তনয়া, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, মানবতার জননী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের শাণিত চেতনায় উজ্জ্বীবিত থেকে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে দেশ গড়ার কাজে দৃপ্ত কন্ঠে শপথ নেয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন চ.বি. রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জনাব কে এম নুর আহমদ। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চবি শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও চবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. রাশেদ-উন-নবী, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ এফ এম আওরঙ্গজেব, সিনেট সদস্য প্রফেসর এ বি এম আবু নোমান, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মহীবুল আজিজ, সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোহাম্মদ বশির আহাম্মদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব মো. শাহ আলম, চ.বি. ক্লাব (ক্যাম্পাস)-এর সাধারণ সম্পাদক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, চবি কমচারী সমিতির সভাপতি জনাব মো. আনোয়ার হোসেন এবং কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি জনাব আলী হোসেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তথ্য) জনাব দিবাকর বড়ুয়া। অনুষ্ঠান শুরুতে বিভিন্ন ধর্মগন্থ থেকে পাঠ করা হয়। অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন। চ.বি. সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠান সূচিত হয়। আলোচনা সভা শেষে চবি সংগীত বিভাগ, নাট্যকলা বিভাগ ও চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিকালে চবি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা।