‘ব্লু স্কাই’ শব্দটি হয়তো ইতোমধ্যেই অনেকের নজরে পড়েছে। বিশেষ করে ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকেই শব্দটির চর্চা অনেক বেশি চোখে পড়ছে কিংবা কানে বাজছে মানুষের। তবে ‘ব্লু স্কাই’ এর সঙ্গে আমেরিকার হয়ে যাওয়া ভোটের সম্পর্ক কি, সে ব্যাপারে জানার আগ্রহ আছে অনেকেরই।
‘ব্লু স্কাই’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স বা সাবেক টুইটার এর মতোই আরেকটি মাইক্রোব্লগিং সাইট। বর্তমানে এর ব্যবহারকারী ১৮ দশমিক ৪ মিলিয়ন হলেও গত কয়েকদিনে খুব দ্রুত বাড়ছে এর গ্রাহকের সংখ্যা। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর গত কয়েকদিনেই এর ব্যবহারকারী বেড়েছে ৫ মিলিয়নেরও বেশি। ইলন মাস্কের জন্য এক্স গণমাধ্যমে যতটা জায়গা করে নিয়েছে ব্লু স্কাই ততোটা প্রচার পায়নি।
অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতোই ব্লু স্কাইয়ের হোমপেজ এ ‘সার্চ’, ‘নোটিফিকেশন’, এর মতো ফিচার রয়েছে ব্লু স্কাই এ। ব্যবহারকারীরা এখানে পোস্ট, কমেন্ট, লাইক কিংবা রিপোস্ট করতে পারেন। গ্রাহক অভিজ্ঞতার দিক থেকে বলা যেতে পারে এটা অনেকটা এক্স এরই অনুরূপ একটি প্ল্যাটফর্ম।
ব্লু স্কাই এর প্রতিষ্ঠাতা এবং টুইটারের সাবেক প্রধান একই ব্যক্তি। অবশ্য জ্যাক ডোরসি ব্লু স্কাইয়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করলেও ২০২৪ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠানের বোর্ড থেকে বেরিয়ে যান। বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মের মালিকানা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী জে গ্রাবার এর কাছে।
২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ব্লু স্কাই আনুষ্ঠানিকভাবে তার কার্যক্রম শুরু করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। এর আগে চলে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ফেব্রুয়ারির পর থেকে ধীরে ধীরে ব্লু স্কাই এর ব্যবহারের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় হঠাৎ করেই বাড়তে থাকে এর জনপ্রিয়তা। এমনকি নির্বাচনের পরের দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এর গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে ৫ মিলিয়নেরও বেশি। এছাড়া নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর ধারণা করা হচ্ছে সামনের দিনগুলোতেও খুব দ্রুত বাড়তে থাকবে ব্লু স্কাই এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপ স্টোরগুলোতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপও ব্লু স্কাই। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে মাইক্রো ব্লগিং সাইট হিসেবে এক্স এর সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আবির্ভূত হবে ব্লু স্কাই।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় এবার কোমর বেঁধে নেমেছিলেন এক্স প্লাটফর্মের মালিক ইলন মাস্ক। ট্রাম্প ও রিপাবলিকান দলের প্রচারণায় তিনি শুধু বিপুল পরিমাণ অর্থই খরচ করেননি, বরং সশরীরেও ট্রাম্পের সঙ্গে থেকে সভা সমাবেশ র্যালিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন মাস্ক। শুধু তাই নয় নিজের মালিকানায় থাকা প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স কেও অনেকটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাউড স্পিকারে পরিণত করেন তিনি।
আর এতেই চটেছেন এক্স প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী ট্রাম্প বিরোধীরা। ইলন মাস্ক এর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে দলে দলে এক্স ছাড়তে শুরু করেন তারা। আর এক্স ছাড়ার পর তাদের অনেকেরই পছন্দের প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়ায় ব্লু স্কাই। কারণ এর ফিচার এবং কার্যক্রম অনেকটাই এক্স এর মতোই। গত কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রি অ্যাপ হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার ডাউনলোড হওয়া প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে ব্লু স্কাই।
এছাড়া দলে দলে এক্স ত্যাগের মিছিলে শুধু সাধারণ ব্যবহারকারীরাই নয়, রয়েছেন সেলিব্রিটিরাও। এমনকি গার্ডিয়ান এর মতো ব্রিটেনের নামকরা গণমাধ্যমও ঘোষণা দিয়ে এক্স এ পোস্ট করা বন্ধ করেছে। এমনকি এক্স’কে বিষাক্ত গণমাধ্যম হিসেবেও অভিহিত করেছে গার্ডিয়ান।
সব মিলিয়ে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সহ অন্যান্য কারণে যারাই এক্স প্লাটফর্ম ত্যাগ করছে তাদের বেশিরভাগেরই প্রথম পছন্দ হয়ে উঠছে ব্লু স্কাই। সাংবাদিক, বাম ঘরানার ও উদারপন্থি রাজনৈতিক এবং সেলেব্রিটিরা এক্স প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে দলে দলে এই প্লাটফর্মে যোগ দিচ্ছে বলে জানিয়েছে এবিসি নিউজ। তাদের মধ্যে অনেকেই এক্স ছাড়ার কারণ হিসেবে ‘হেট স্পিচ’ এর কথা উল্লেখ করেছেন। আর তাদের ব্লু স্কাই প্ল্যাটফর্মে ঝুঁকে পড়ার কারণ হিসেবে এই প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন না থাকার বিষয়টির কথা জানিয়েছে এবিসি। ব্লু স্কাই ব্যবহারকারীদের মধ্যে রয়েছেন এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থনকারী কোটিপতি ব্যবসায়ী মার্ক কিউবান ও প্রভাবশালী কংগ্রেস সদস্য আলেক্সান্দ্রা ওরকাসিও কর্টেজ। এছাড়া নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, ভ্যানিটি ফেয়ার ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এর মতো সংবাদমাধ্যমও ইতোমধ্যেই ব্লু স্কাই ব্যবহার শুরু করেছে।