ঈদগাঁওতে ওসি-ইউএনও’র পরস্পর বিরোধী বক্তব্য!

সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় জড়িত কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমার সরকারি গাড়িটি পোড়ানোর ঘটনায় সরকার পতন পরবর্তী তিনমাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত রহস্যজনক কারণে মামলা করেনি ইউএনও। মামলা না হওয়ার কারণ নিয়ে ইউএনও ও দুই ওসির পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। ছাত্র-জনতা ও সচেতন মহলের প্রশ্ন তবেই কি ইউএনও সুবল চাকমা তার সাথে হামলায় অংশগ্রহণকারী আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রক্ষায় মামলা করছেন না!

প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিগত ৪ আগস্ট ঈদগাঁও ইউএনও সুবল চাকমা আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সাথে ঈদগাঁও বাসস্টেশনে আন্দোলনকারী ছাত্র -জনতার উপর সশস্ত্র হামলায় অংশ নেন। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে ২০/৩০ টি ছোট বড় গাড়ি অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। যার মধ্যে ইউএনও’র সরকারি গাড়িটাও ছিল। পরে আন্দোলনকারীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে ইউএনওসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পায়। যার ভিডিও চিত্র ভাইরাল হয়। ঐ সময়কার টানা তিন দিনের আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নুরুল মোস্তফা নামে এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নিহত ও ২০/২৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। যার মধ্যে কেউ কেউ এখনো চিকিৎসাধীন।
আন্দোলন পরবর্তী সরকার পতনের তিন মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও সরকারি গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইউএনও সুবল চাকমা বলেন,ঘটনা পরবর্তী তখনকার ঈদগাঁও থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমার কাছে গেলে তিনি মামলা নেননি।

পরে বদলি হয়ে যাওয়া ওসি শুভ রঞ্জন চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,ইউএনও মামলা করতে থানায় আসেননি,তাই মামলা হয়নি।
বর্তমান ওসি মশিউর রহমানের কাছে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা পরবর্তী তখনকার ওসির নিকট ইউএনও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় একটি জিডি করেছিলেন, উর্ধতন কতৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে ওটা মামলায় রুপান্তরিত হবে।
সরকারি সম্পদ ইউএনও’র গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় মামলা হওয়া, না হওয়া নিয়ে দায়িত্বশীল তিন কর্মকর্তার পরস্পর বিরোধী বক্তব্য কি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রক্ষার সম্মিলিত কৌশল!

জনমনে তীব্র প্রশ্ন উক্ত ইউএনও সুবল চাকমা বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে যোগদানের পর থেকে বিগত এক বছর পর্যন্ত, এমন কি আওয়ামী সরকার পতন পরবর্তী তিনমাসেও উপজেলার সর্বক্ষেত্রে আওয়ামী করণ করে নিজের আখের গোছানো ছাড়া জনকল্যাণ ও সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোন কাজই করেননি উপজেলা বাসীর জন্য। বরং তিনি তার উপজেলা কার্যালয়কে অঘোষিত আওয়ামী কার্যালয়ে পরিণত করেছিল। আওয়ামী সরকার পতন পরবর্তীও কিছু নব্য দালাল চক্রের যোগসাজশে পূর্বের আওয়ামী দোসরদের সাথে গোপনে সম্পর্ক রেখে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল।

অন্তবর্তী সরকারের কোন নির্দেশনাই বিগত তিন মাসে তিনি বাস্তবায়ন করেননি। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে তার বদলির দাবি উঠে। অতিসম্প্রতি তাকে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলায় তাকে বদলির আদেশ দেয়া হয়। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাতের আধাঁরে বিগত এক বছরে তার উপজেলা প্রশাসনের আজ্ঞাবহ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও থানা প্রশাসনের ওসিসহ অন্যদের নিয়ে বিদায়কালীন ভুরিভোজের আয়োজনও করে। নিজেকে ক্লিন ইমেজের অধিকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে কৌশলে কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিও ঘটিয়েছিল। পরে তারা এটা বুঝে বিব্রতও হয় বলে জানা গেছে। যে সংবাদে উপজেলা জুড়ে তীব্র আলোচনা -সমালোচনা শুরু হয়।

সচেতন জনগণের প্রশ্ন আওয়ামী দোসর এ ইউএনও কি অন্তবর্তী সরকারের সময়েও পুরুস্কৃত হয়ে তার স্ত্রীর নিকটবর্তী উপজেলায় বদলি হলেন! তাদের দাবি ছাত্র-জনতার উপর হামলায় জড়িত আওয়ামী দোসর ইউএনওকে আইনের আওতায় এনে বদলি নয়,ওএসডি করা হউক।