অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে: পুলিশ

চট্টগ্রাম মহানগরের রহমতগঞ্জে জেএমসেন হলে পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছে। দু’জনই মাদরাসা শিক্ষক বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপ-কমিশনার (অপরাধ) রইছ উদ্দিন।

তিনি জানান, আটকদের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় তাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থেকে থাকলে তার ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে জানান সিএমপির এ কর্মকর্তা।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে তারা সেখানে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত সজল দত্তকে আমরা পাইনি। চেষ্টা চালাচ্ছি। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

তিনি বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্যান্য দিনের মতো পূজামণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিলো। সেখানে দর্শনার্থীরা এসেছিলেন, তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করছিলেন। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির কিছু শিল্পী পূজা কমিটিরই একজন সদস্যের অনুরোধে পূজা মণ্ডপের স্টেজে গান পরিবেশন করেন। তারা দুটি গান পরিবেশন করেন, এর মধ্যে একটি গানের শব্দচয়নে পূজার্থী পূর্ণার্থীর মনে আঘাত হানে। বিষয়টি অতি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরপর অভিযান চালিয়ে দু‘জনকে আটক করা হয়।

আটক দু’জন হলেন, শহীদুল করিম (৪২) ও মো. নুরুল ইসলাম (৩৪)। এরমধ্যে শহীদুল করিম (৪২) তানজিমুম উম্মা মাদরাসা ও মো. নুরুল ইসলাম (৩৪) দারুল ইরফান মাদরাসার শিক্ষক।

এর আগে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই জনকে গ্রেফতারের তথ্য জানানো হয়। এ ঘটনায় নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠানের মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীরা। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম রাতেই পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। তিনি ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল জানান, সংগঠনটির সদস্যরা যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে গান পরিবেশন করেছেন তারা। আমাদের অনুমতি নিয়েই সংগঠনটির সদস্যরা শাহ আবদুল করিমের বিখ্যাত গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম এবং শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান গান দুটি পরিবেশন করে। এর মধ্যে শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম গানটির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

এই ঘটনায় পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে দায়ী করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই। ফলে দায়িত্ব থেকে সজল দত্তকে বরখাস্তের ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য। রাতেই নগরের জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপের মঞ্চে তাকে বরখাস্তের ঘোষণা দেন তিনি।

একইভাবে ইসলামি সাংস্কৃতিক সংগঠনটির সভাপতি সেলিম জামান দাবি করেছেন, তারা জোরপূর্বক কোনো কাজ করেননি, দাওয়াত পেয়েই তারা গান করতে গিয়েছিলেন। আর গানগুলো ছিল সম্প্রীতির, কোনো উগ্রবাদি নয়। গান পরিবেশনের মূল লক্ষ্য ছিল আমরা সবাই এক, দেশটা সবার।

এ ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছে সংগঠনটি। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছে ইসলামি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাতে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টের মাধ্যমে ইসলামি ছাত্রশিবিরের অবস্থান তুলে ধরে এ দাবি জানান তিনি।

ওই পোস্টে জাহিদুল ইসলাম লিখেন, এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন। আমি দায় নিয়ে বলছি, এর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো

সম্পৃক্ততা নেই। শিবির কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, এমন কাজ কখনোই সমর্থন করে না। তাই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

তিনি আরও লিখেছেন, ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে স্পষ্ট দাবি জানাচ্ছি, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত সত্য সবার সামনে উঠে আসুক। কেউ দোষী হলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেওয়া হোক।

সত্যতা যাচাই না করেই বিভিন্ন সময় শিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয় জানিয়ে ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেন, সত্যতা যাচাই না করেই যারা শিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালায়, তারা একটা সময় গিয়ে নিজেদের বিবেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। এ ধরনের কাজ থেকে ভবিষ্যতে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।