ইসরাইলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার এক বছর আজ। ২০২৩ সালের এই দিনে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে ইসরাইলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। পাল্টা গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল।
৭ অক্টোবর ২০২৩, ভোর সাড়ে ৬টা। ইসরাইলজুড়ে একের পর এক রকেট নিক্ষেপ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। মাত্র ২০ মিনিটে আয়রন ডোমকে পাশ কাটিয়ে কয়েক হাজার রকেট ছোড়ে সংগঠনটি।
এরপর জল, স্থল ও আকাশপথে দখলদার রাষ্ট্রের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ঢুকে পড়ে হামাসের যোদ্ধারা। প্রথমেই কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় তারা। বেশ কয়েকটি বসতির নিয়ন্ত্রণের দাবিও করে। চোখের সামনে যাকে পায় তাকেই গুলি করে হত্যা করা হয়। রেইম শহরের কাছে মরুভূমিতে একটি সংগীত উৎসবে তাদের গুলিতে বহু মানুষ হতাহত হন।
সাইরেনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ইসরাইলিদের। ততক্ষণে জ্বলছে ইসরাইল। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, তেল আবিব, জেরুজালেমসহ বিভিন্ন শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা না গেলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা দৃশ্যমান হতে থাকে।
ইসরাইলে হামাসের কয়েক ঘণ্টার অভিযানে প্রাণ হারান প্রায় ১২শ মানুষ। নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে গাজায় ফেরত চলে যায় হামাস যোদ্ধারা। সঙ্গে জিম্মি হিসেবে নিয়ে যায় প্রায় ৩ শ জনকে। গাজার নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীটি সেই সামরিক অভিযানের নাম দেয় অপারেশন আল আকসা ফ্লাড।
অতর্কিত এই আক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সময় লেগেছে সাধারণ ইসরাইলিদের। তবে, পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাতে খুব বেশি সময় নেয়নি ইসরাইল সরকার।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধের ঘোষণা দেন। গাজায় হামাসবিরোধী অভিযানের নামে শুরু হয় বোমা বর্ষণ। অবরুদ্ধ অঞ্চলটির ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ জারি করে নেতানিয়াহু প্রশাসন। বিদ্যুৎ, পানি, খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিরা।
ওইদিনই হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়ে ইসরাইলের পাশে এসে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। সবধরনের সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়। অন্যদিকে, সাধারণ ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয় ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্ররা।
গাজা যুদ্ধের মধ্যে অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ধরপাকড় বাড়িয়েছে ইসরাইল। সেখানে এক বছরে ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত এক বছরে ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় এক লাখ মানুষ।
দ্য নিউ হিউম্যানিটেরিয়ানের তথ্যানুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ১৬ হাজারের বেশি শিশু। ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ আছেন। তারা ভবনের ধ্বংসস্তূপে প্রাণ হারিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৩০৬ জন মানবিক সহায়তাকর্মী ও ৯ শতাধিক চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন উপত্যকায়।
গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১৯ লাখের বেশি, যা উপত্যকাটির মোট বাসিন্দার ৯০ শতাংশ। মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি বিপর্যয়কর খাদ্য সংকটের মধ্যে রয়েছে।
অনলাইন গণমাধ্যম এক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরে গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। আনুমানিক ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৯১টি আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হয়েছে। উপত্যকার ৬৮ শতাংশ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি বন্ধ হয়ে গেছে; আরও ১৭টি চলছে খুঁড়িয়ে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত সেপ্টেম্বরে বলেন, তিনি এমন হারে মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞ আর কখনও দেখেননি।
চলমান গাজা যুদ্ধের মধ্যেই ইসরাইল লেবানন সংঘাত এবং ইরানের সঙ্গেও ইসরাইলের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করছে যা যেকোনো সময় সরাসরি যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।