ডাইনোসরদের হত্যাকারী নিশ্চিহ্ন করে আরেক বড় প্রাণীকে

ডাইনোসরই একমাত্র প্রজাতি ছিল না যা বিশাল গ্রহাণু বিধ্বস্ত হওয়ার পরে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। সাড়ে ছ’কোটি বছরেরও বেশি সময় আগে, বিশাল এক গ্রহাণু আছড়ে পড়েছিল পৃথিবীর বুকে। ডাইনোসর প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছিল সেই গ্রহাণু-বিপর্যয়েই। বহু গবেষণার পরে সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু আরও জানা গেছে, একমাত্র ডাইনোসরই নয়, আরও এক প্রাণী প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল ওই গ্রহাণু। নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত একটি নতুন সমীক্ষা দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত বিশ্বাসকে উল্টে দিয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসর বিলুপ্তির আগেই ওই গ্রহাণুর গ্রাসে শেষ হয়ে গিয়েছিল অ্যামোনাইট প্রজাতি। বৃস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদদের নেতৃত্বে গবেষণাটি পরামর্শ দেয় যে এই আইকনিক সামুদ্রিক মলাস্কগুলির আকস্মিক মৃত্যু ঘটে ডাইনোসরদের সাথে। আজ থেকে প্রায় ৮ কোটি বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরে এই অ্যামোনাইট নামের বিচিত্র প্রাণীই বাস করত। প্রাণীটির জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, এটির শরীরের অর্ধেক অংশ স্কুইডের মতো আর আধা অংশ আপেল শামুকের মতো পুরু বাঁকানো খোলে মোড়া!

বিজ্ঞানীদের দাবি, এই সামুদ্রিক প্রাণীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ ফুটের মতো ছিল। সেফালোপোডা শ্রেণীর অন্তর্গত এই প্রাণীর সাথে আধুনিক সময়ের স্কুইড, অক্টোপাস এবং কাটলফিশ-এর মিল রয়েছে।

গবেষণার প্রধান লেখক, ডক্টর জোসেফ ফ্ল্যানারি-সাদারল্যান্ড সময়ের সাথে জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তনগুলো বোঝার চ্যালেঞ্জগুলোর উপর জোর দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ করেছেন যে, জীবাশ্ম রেকর্ড অনেক অজানা তথ্য আমাদের সামনে নিয়ে আসতে পারে। তবে জীবাশ্মের রেকর্ডের উপরেও পুরোপুরি বিশ্বাস করা যায় না। কারণ বহু মিসিং লিঙ্ক রয়েছে এই জীববৈচিত্র্যের ইতিহাসে।

গবেষক দলটি লেট ক্রিটেসিয়াস অ্যামোনাইট জীবাশ্মগুলোর একটি নতুন ডাটাবেস একত্রিত করে নমুনাগুলোর শূন্যস্থান পূরণে মন দিয়েছেন। গবেষণায় পরিবেশগত অবস্থা (কোর্ট জেস্টার হাইপোথিসিস) এবং জৈবিক প্রক্রিয়া (রেড কুইন হাইপোথিসিস) উভয় বিবেচনা করে অ্যামোনাইট বৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করার কারণগুলো অন্বেষণ করা হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম অ্যামোনাইটের জীবাশ্মটি পাওয়া গিয়েছিল ১৮৯৫ সালে জার্মানিতে। ওই জীবাশ্মটির ব্যাস ছিল প্রায় ৫.৭ ফুট। বিজ্ঞানের ভাষায় একে Parapuzosia seppenradensis বলা হয়। ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, লন্ডনের ডক্টর জেমস উইটস, অ্যামোনাইট বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পার্থক্য বিবেচনা করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেছিলেন যে অ্যামোনাইটগুলো কিছু অঞ্চলে বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল, কিন্তু তাদের বিলুপ্তি একটি অনিবার্য ফল ছিল।

সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে