সিলেটে দ্বিতীয় দফা বন্যা : লাখো মানুষের পানিবন্দি ঈদ

দুর্যোগের ঘনঘটা কাটছে না সিলেটে। একের পর এক দুর্যোগে কাবু এ জনপদের মানুষ। এক মাসের মধ্যে ফের দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে নগরটিতে। এমন অবস্থায় লাখো মানুষ হয়ে পড়েছেন পানিবন্দি। বন্যার কারণে অনেকেই প্রথম দিনে কোরবানি দিতে পারেননি। দ্বিতীয় দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশায় রয়েছেন তারা।

বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরের নিম্নাঞ্চলও। খোদ নগরেই হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নগরের উপশহর, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়াসহ নগরের অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকার লোকেরাও প্রথম দিনে কোরবানি আদায় করতে পারেনি। পানি নামার অপেক্ষায় দিন কাটিয়েছেন তারা।

উপশহর এলাকার শিক্ষক আব্দুল মোমেন জানান, রাস্তায় পানি, বাসার নিচ তলা পানির নিচে। এ অবস্থায় অনেকে পশু কোরবানি করতে পারেননি। কেউ কেউ আবার দুরবর্তী উচু স্থানে গিয়ে কোরবানি দিয়ে মাংস নিয়ে এসেছেন।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ২৪ ঘন্টায় ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। বেলা ১টার পর নগরে বৃষ্টিপাত কমলেও জেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি অব্যাহত ছিল। সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে উঠে এসেছে। উজান থেকে নামছে ঢলও।

সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি এবার স্থায়ী রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছে পাউবো। সংস্থাটি বলছে, ঈদের দিন সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে ৩টি নদীর পানি ৩টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেটের সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের মিডিয়া উইং জানিয়েছে, সিলেটের সদর, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১ লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ জন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এসব উপজেলার ৫১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সিলেটের সব উপজেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে শনিবার থেকে মানুষজন উঠতে শুরু করেছেন।

এদিকে বজ্র-বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় সিলেটের ঐতিহাসিক শাহী ঈদগাহ এলাকায় কয়েক হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। অথচ প্রতি ঈদের জামায়াতে ঈদগাহে লক্ষাধিক মুসল্লি একসঙ্গে জামায়াত আদায় করতে দেখা যায়। এই ঈদে নিজ এলাকার মসজিদে মুসল্লিরা জামায়াত আদায় করেন।