ঐতিহাসিক অস্বাভাবিক জোট, রামাফোসাই দ. আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট

ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক এক চুক্তির পর দক্ষিণ আফ্রিকার পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাকে আবারও একই পদে নির্বাচিত করেছে। এই জোটে আছে রামাফোসার এএনসি, মধ্য-ডানপন্থি ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স (ডিএ) এবং কিছু ছোট দল। নির্বাচিত হওয়ার পর বিজয়ী ভাষণে রামাফোসা নতুন এই জোটের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, ভোটারদের প্রত্যাশা এই দেশের নেতারা দেশের প্রতিটি মানুষের মঙ্গলের জন্য একত্রিত হয়ে কাজ করুন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, দিনভর রাজনৈতিক এক উচ্চ মাত্রার নাটকীয়তার পর এই চুক্তি হয়েছে বিরোধীদের সঙ্গে। সারাদিন ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে কে ক্ষমতায় আসবেন তা নিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। পরে তারা একটি চুক্তিতে আসেন। এর আগে ৩০ বছরের মধ্যে গত মাসের নির্বাচনে প্রথমবার পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় এএনসি। তারপর থেকেই প্রশ্ন উঠতে থাকে তাদের সঙ্গে কে জোট গঠন করতে চলেছে তা নিয়ে।

নির্বাচনে এএনসি শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পেয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ডিএ পেয়েছে শতকরা ২২ ভাগ ভোট। নতুন চুক্তিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এএনসির সেক্রেটারি জেনারেল ফিকিল এমবালুলা। এর অর্থ হলো রামাফোসা ক্ষমতায় ফিরতে সক্ষম।

উল্লেখ্য, সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার কাছ থেকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নেন সিরিল রামাফোসা। ২০১৮ সালে তাদের মধ্যে ক্ষমতা নিয়ে তিক্ততা সৃষ্টি হয়। তারা দু’জনেই তখন এএনসির নেতা।
এখন রামাফোসার সামনে যে কাজ তা হলো মন্ত্রিপরিষদ পুনর্বিন্যাস করা। তাতে স্থান দিতে হবে ডিএ-এর সদস্যদের। তবে নতুন এই জোটে এএনসি থেকে ভেঙে যে অন্য দুটি দল সৃষ্টি হয়েছে, তারা নেই। যদি এই সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভোটারদের দাবি পূরণে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা লাভবান হতে পারে। জনমত জরিপ বলছে বেশির ভাগ সাউথ আফ্রিকান চাইছেন এই মহা জোট সরকার সফল হোক। ১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবার গণতান্ত্রিক নির্বাচন হয়। তাতে প্রেসিডেন্ট হন বর্ণবাদ বিরোধী প্রয়াত নেতা, কিংবদন্তি নেলসন ম্যান্ডেলা। ওই সময় থেকে সব নির্বাচনে শতকরা ৫০ ভাগের ওপরে ভোট পেয়েছে এএনসি। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং অপরাধ বৃদ্ধির কারণে এই সমর্থন কমে গেছে দলটির।
পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সিরিল রামাফোসা ৩০ বছর আগে তার দলের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনকে স্মরণ করেছেন। বলেছেন, আমরা ১৯৯৪ সালে যেখানে ছিলাম, সেখানে ফিরতে চাই একতার মাধ্যমে। কিন্তু মধ্য-ডানপন্থি ডিএ এবং এএনসির মধ্যে জোট হওয়া একটি অস্বাভাবিক বিষয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, কয়েক দশক ধরে তাদের মধ্যে তীব্র বিরোধ বিরাজ করছে।