হঠাৎ রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি অদৃশ্য হয়ে যায়

ইরানের প্রসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হলেও তার বহরে থাকা বাকি দুই হেলিকপ্টার অক্ষত অবস্থায় গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এতে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের জাল ছড়িয়েছে। কিভাবে বাকি দুইটি হেলিকপ্টার নিরাপদ ছিল! এই প্রশ্নটাই ঘুরছে সবার মধ্যে। তবে কিছুটা দেরি হলেও জানা গেল সে প্রশ্নের উত্তর। রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল তা নিয়ে মুখ খুলেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ গোলামহোসাইনি ইসমাইলি।

গত রোববার দুর্ঘটনার দিন রাইসির বহরে থাকা অন্য একটি হেলিকপ্টারে অবস্থান করেছিলেন তিনি। সোমবার দেশটির একটি টিভি চ্যানেলে গোলামহোসাইনের এক সাক্ষাৎকারের বরাতে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনা এ তথ্য জানিয়েছে।আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় গত রোববার দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিথ একটি বাঁধ উদ্বোধন করে তিন হেলিকপ্টারের একটি বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের তাবরিজে ফিরছিলেন রাইসিসহ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ান ও বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা। সেসময় আজারবাইজান প্রদেশের একটি দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বিধ্বস্ত হয় রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি। এটি যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বেল-২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার ছিল। তবে অন্য দুটি হেলিকপ্টার নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছায়।

সেদিন কিভাবে রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়ে সে ঘটনা জানিয়েছেন গোলামহোসাইনি। টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ঘটনার দিন দুপুর একটা নাগাদ তিবরিজ শহরের উদ্দেশে রওনা হন রাইসির বহরের তিনটি হেলিকপ্টার।

সেসময় আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিল। প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার মাঝখানে ছিল। পুরো বহরের দায়িত্বে ছিল প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলটের ওপর। যাত্রা শুরুর প্রায় ৪৫ মিনিট পর রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের পাইলট অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটকে ঘন মেঘ এড়িয়ে যেতে আরও উঁচুতে উঠে ভ্রমণ করার নির্দেশ দেন।

ইসমাইলি বলেন, ওই সময় হঠাৎ রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি অদৃশ্য হয়ে যায়। ঘন মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার ৩০ সেকেন্ড পর আমাদের পাইলট প্রথম খেয়াল করেন, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি দেখা যাচ্ছে না। এরপর আমাদের পাইলট বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকেন। হেলিকপ্টারটি খুঁজতে থাকেন।

রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার রেডিও ডিভাইসে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যার্থ হন অন্য হেলিকপ্টারের পাইলট। এরপর তাদের হেলিকপ্টারটি উচ্চতা কমিয়ে আনে এবং পাশের একটি তামার খনিতে অবতরণ করে, এমনটাই জানান গোলামহোসেইন ইসমাইলি।

ইসমাইলি আরও বলেন, ওই সময় ‘অদৃশ্য হয়ে যাওয়া’ হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদোল্লাহিয়ান ও প্রেসিডেন্ট রাইসির নিরাপত্তা ইউনিটের প্রধানকে বারবার কল করা হয়। কিন্তু তাদের কারোরই সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্য দুটি হেলিকপ্টারের পাইলটরা প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন মোস্তাফাভিকে কল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি বলেও জানান ইসমাইলি।

ইসমাইলি বলেন, জটিল ওই পরিস্থিতিতে শুধু রাইসির হেলিকপ্টারে থাকা মোহাম্মদ আলী আল-হাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। তার অবস্থা ভালো ছিল না। কিন্তু শুধু জানান, একটি উপত্যকায় তাদের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপর ইসমাইল আরেকবার আল-হাশেমকে কল করতে সক্ষম হন। তখনো একই কথা জানান। মোহাম্মদ আলী আল-হাশেম ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির মুখপাত্র।

গোলাম হোসেইন ইসমাইলি বলেন, আমরা যখন বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাই, সেখানে সবার মরদেহ দেখি। বুঝতে পারি, প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ অন্য ব্যক্তিরা তাৎক্ষণিকভাবে শহীদ হয়েছেন। তবে একমাত্র আল-হাশেম হয়তো ঘণ্টাখানেক বেঁচে ছিলেন। ইরানের রাজধানী তেহরানে বুধবার রাইসির জানাজা নামাজের ইমামতি করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এছাড়া রাইসিকে শেষবিদায় জানাতে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তারের মানুষ জরো হয় তেহরানে। বৃহস্পতিবার রাইসির জন্মস্থান মাশহাদে তাকে দাফন করা হবে।