শুকিয়ে গেছে কাপ্তাইয়ের শতাধিক পাহাড়ি ছড়া

সুপেয় পানির মারাত্বক সংকট

মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই (রাঙামাটি)। সারাদেশে চলছে তীব্র তাপদাহ ও অনাবৃষ্টি। তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির ফলে কাপ্তাই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক পাহাড়ি ছড়া শুকিয়ে গেছে। এতে সুপেয় পানির মারাত্বক সংকটে ভুগছে পাহাড়ি এলাকার হাজার হাজার মানুষ। এসব এলাকার অনেক স্থানে গভীর নলকুপ থাকলেও ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় পানির স্তর নীচে নেমে গেছে। ফলে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে না এলাকাবাসী। বাধ্য হয়ে দূরবর্তী নদী থেকে খাবার পানি ও ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করে এলাকাবাসীকে নিত্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালির কাজ সারতে হচ্ছে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের শীলছড়ি ছড়া, ভেলাপ্পা পাড়া ছড়া ও চিৎমরম ইউনিয়নের জামাইছড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়া গুলো শুকিয়ে গেছে। কোথাও এক ফোটা পানির দেখা মেলেনি। পানি সংকটে হা-হুতাশ করছে এলাকাবাসী। এসময় এক কলস সুপেয় পানির জন্য কয়েক কিঃ মিটার পায়ে হেঁটে কর্ণফুলী নদী হতে পানি আনতে দেখা যায় এলাকাবাসীকে। শীলছড়ির মহাজন পাড়ার বাসিন্দা তয়ন মারমা, সুখি ইসলাম ও শীলছড়ি বাজারের মোঃ শাহআলম জানান, সাধারণত মার্চ মাস থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছড়া গুলোতে পানি থাকেনা। আবার কোথাও সামান্য পরিমানে পানি থাকে। কিন্তু এবছর ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। তীব্র তাপদাহে ছড়া গুলো একেবারে শুকিয়ে গেছে। কোথাও পানির দেখা নেই। ফলে এই এলাকার শত শত পরিবার সুপেয় পানির সংকটে ভুগছেন। কয়েক কিঃ মিটার পথ পায়ে হেঁটে গিয়ে আমাদের কর্ণফুলী নদী থেকে খাওয়ার এবং ব্যবহারের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট দূর হবে না। চিৎমরম ইউনিয়নের জামাইছড়ি এলাকার বাসিন্দা ক্যাংচিং মারমা, আথুই মারমা জানায়, ছড়ায় এখন পানি নেই। কর্ণফুলী নদীতে জোয়ার আসলে ছড়া দিয়ে একটু পানি আসে, আবার ভাটার টানে পানি নদীতে নেমে যায়। আমরা পানির জন্য খুব কষ্টে আছি। ১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুণ তালুকদার বলেন, আমার মৌজার অধীন দেবতাছড়ি ছড়া, ওয়াগ্গাছড়া, ফইরা মুরং ছড়া, নুনছড়ি, মধুছড়ি ছড়া সহ ১৫ টির অধিক ছড়া আছে । এছাড়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে শতাধিক ছড়া আছে। তীব্র তাপদাহ এবং অনাবৃষ্টির কারণে এখন ছড়া গুলো শুকিয়ে গেছে। ফলে খাবার পানি সহ ব্যবহারের পানির সংকটে ভুগছেন হাজার হাজার এলাকাবাসী। ১নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য আথুই তনচংগ্যা বলেন, আমার এলাকার রেশমবাগান ছড়াতে এক ফোঁটা পানিও নেই।এলাকাবাসী ছড়াতে গভীর গর্ত খুঁড়েও পানি পাচ্ছে না। রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মংক্য মারমা বলেন, এই ইউনিয়নের বালামছড়া, গ্রংরি ছড়া, কালামাইস্যা ছড়া, জগনাছড়ি ছড়া সহ অনেক ছড়া আছে। সবকটি ছড়াতে এখন পানি নেয়। তীব্র পানি সংকটে ভুগছে এলাকার মানুষ। সহসা বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট দূরীভুত হবে না। কাপ্তাই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিমন চন্দ বর্মন বলেন, সাধারণত মার্চ এপ্রিল মাসে বৃষ্টি না হওয়ার কারনে ছড়া এবং ঝর্ণা গুলোর পানি শুকিয়ে যায়। এবার প্রচন্ড তাপদাহে ওই সময়ের আগেই ছড়া এবং ঝর্নার পানি শুকিয়ে গিয়ে পানি সংকট মারাত্বক আকার ধারণ করেছে। বৃষ্টি হলেই পানির এই সংকট নিরসন হবে।