উপজেলা নির্বাচনে সংঘাত এড়াতে বিভিন্ন চিন্তা আ.লীগের

আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের নেতা-কর্মীরা যাতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে না পড়েন সেটাও এড়ানোর চেষ্টা করছে দলটি।
এর জন্য কিছু কৌশলও নেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দ্বন্দ্ব-সংঘাত পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব না এটাও মনে করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না দেওয়া এবং কেন্দ্র থেকে প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। উন্মুক্ত নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে অনেক নেতাই প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কোনো কোনো উপজেলায় পাঁচ থেকে ছয়জন করে প্রার্থীর কথা শোনা যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের যথেষ্ট আশঙ্কা দেখছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। এ দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়ানো বা এর থেকে নেতা-কর্মীদের কতটা দূরে রাখা যায় তা চিন্তা-ভাবনা ও বিভিন্ন কৌশলের কথা ভাবা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলায় নেতাদের প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা দিতে না পারলেও প্রার্থী যাতে কম হয় সে বিষয়টি নিয়ে ভাবা হচ্ছে। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ অবস্থান নেওয়ার ফলে এখন প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী বিশেষ করে চেয়ারম্যান প্রার্থী এত বেশি হয়ে যাচ্ছে যার ফলে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য একাধিক প্রার্থী থাকতে হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রার্থী কম থাকলে সমস্যা কম হবে। পাশাপাশি দলের স্থানীয় গুরতুপূর্ণ ও জনপ্রিয় নেতার জেতা নিশ্চয়তা যাতে থাকে সে চিন্তাও করা হচ্ছে। দল থেকে বেশি প্রার্থী হলে সেখানে দলের বাইরে বা আওয়ামী লীগ বিরোধী কোনো প্রার্থী থাকলে তার জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে বলেও মনে করা হচ্ছে। এ কারণে প্রার্থী যাতে কম হয় সে চেষ্টা থাকবে। দলের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রার্থীকে জিতিয়ে আনতে স্থানীয়ভাবে অর্থাৎ জেলা-উপজেলা থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সমঝোতা করার উদ্যোগ থাকতে পারে।

এদিকে দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে এ আশঙ্কাও করা হচ্ছে। এ কারণে আগে থেকেই এমপি-মন্ত্রীদের উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ না করতে দল থেকে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে। কেউ হস্তক্ষেপ করলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না এমন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের রংপুর, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী-এমপিদের ব্যাপারে দলের এ অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন। অন্য বিভাগগুলোর নেতাদের সঙ্গেও এ ধরনের মতবিনিময় সভা করা হবে।

আওয়ামী লীগের ওই সূত্রগুলো জানায়, বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের আশঙ্কামুক্ত হওয়া যাচ্ছে না বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। অতীতে দলীয়ভাবে ও দলের প্রতীকে নির্বাচন না হলেও দল থেকে একজন প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হতো। এরপর দলীয় প্রতীকে নির্বাচন পদ্ধতি চালু করার পর দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন হয়েছে। তারপরও স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে দলের সিদ্ধান্তের বাইরেও কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন। শুধু অন্য দলের প্রার্থীর সঙ্গেই নয়, নিজ দলের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যেও দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়ানো যায়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব সময়ই দ্বন্দ্ব-সংঘাত হয়ে থাকে। প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটে। এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ঠেকানো সম্ভব না হলে এটাকে অনেকটা স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে হবে বলেও আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য জানান, দলের কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনাই থাক, কেন্দ্র তো কেন্দ্রের মতো নির্দেশনা দেবেই, সেটা যেমন দেখতে হবে আবার স্থানীয় বাস্তবতাওতো আমাদের দেখতে হবে। আওয়ামী লীগ থেকে কয়েকজন করে প্রার্থী হবে। সেখানে আওয়ামী লীগ বিরোধী, জামায়াত, সাম্প্রদায়িক দলের কোনো প্রার্থী থাকলে তিনি জিতে যাবেন। সে বিষয়টিওতো দেখতে হবে। দলের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীকে তো বের করে আনার চেষ্টা করতে হবে আমাদের।

উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা পরিষদ একটা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব সময়ই প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, সংঘাত হয়। এর মধ্যে ব্যক্তি দ্বন্দ্ব থাকে, খালের এপার-ওপারের, নদীর এপার-ওপারের মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে। এর থেকে সংঘাতও হয়, এগুলো কম বেশি হয়ে থাকে। এ নির্বাচনকে সেভাবে দেখতে হবে। তবে আমি মনে করি কোনো সমস্যা হবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি একটা ভালো নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচনের। সংসদ সদস্যরা যাতে হস্তক্ষেপ না করে সেটা বলা হচ্ছে। বার বার সতর্ক করা হয়েছে। সংকট যাতে না হয় সে চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচনে কেউ দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষ পুরোপুরি ঠেকাতে পারবে না। পরিস্থিতি অনুযায়ী জেলা-উপজেলা থেকে সমঝোতার মাধ্যমে যদি কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেয় তাতে তো কেউ বাধা দেবে না।