ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক গণপাঠাগার-এর ‘প্রতিদিনের ইফতার’

শহুরে জীবনে ইফতার আয়োজন যখন অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে ঠিক সেসময়টিতে একটি প্রান্তিক জনপদে স্থানীয় মসজিদে এলাকার গরীব-অস্বচ্ছলদের জন্য ‘প্রতিদিনের ইফতার’ উদ্যোগ রাউজানে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে।
রাউজানের ১১নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং নিউক্লিয়াস ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের কীর্তিমান সংগঠক ও রাউজান থানা আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, ১১নং পশ্চিম গুজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনী প্রধান, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী, রাউজানে সমবায় আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা এ.কে ফজলুল হক চেয়ারম্যানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বছরব্যাপী গৃহিত ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে চলতি বছরে ১ম রোজায় এ উদ্যোগের শুভ সূচনা করে ‘ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে ফজলুল হক গণপাঠাগার’।
শুরুতে ১০/১৫ জন সুবিধাবঞ্চিত ইফতার করলেও প্রতিদিনই বাড়ছে উপস্থিতি। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতিতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে ইফতারির সময়টি।
ইফতারের মধ্যে রয়েছে ট্যাং-এর শরবত, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুণী, চপ, সালাদ, মুড়িসহ নানা রকমের ফল।
২৯ মার্চ, শুক্রবার স্থানীয় মোঃ তকি সিকদার সার্বজনীন জামে মসজিদে ধনী-গরীবের মিলন মেলা বসেছিলো। এদিন পাঠাগারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর শেষে সদ্য দেশে ফিরলে গ্রামবাসীর সাথে ইফতারে মিলিত হন। এ সময় মসজিদে উপছে পড়া ভীড় ছিলো। হতদরিদ্র গ্রামবাসীর সাথে স্বচ্ছল লোকজনও ইফতারে অংশ নেন।
মসজিদের পেশ ইমাম মৌলানা হোসাইন আহমদ তাফসীর বলেন, পবিত্র মাহে রমজানে সকল দুরত্ব ঘুচিয়ে সামর্থ্যের মধ্যে সবার সাথে অন্তত এক বেলা ইফতার করানোর মধ্যে একটি মানসিক প্রশান্তি রয়েছে। ধর্মীয় শান্তি ও সওয়াব তো আছেই। মানুষ চাইলেই কাউকে কিছু দিতে কিংবা খাওয়াতে পারে না-এটার জন্যও আল্লাহ্’র হুকুম দরকার।
আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক শওকত বাঙালি বলেন, কিছু পাওয়া বা কাউকে দেখানোর জন্য নয়। শুধুমাত্র পারিবারিক শিক্ষা ‘মানুষের জন্য করা’ সেটাই বাস্তবায়নের একটি উদ্যোগ নিয়েছি মাত্র। এলাকার কতিপয় ব্যক্তির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের সাথে কেউ প্রতিযোগিতায় নামতে চাইলে সুস্থ প্রতিযোগিতায় আসতে হবে। আমার সামর্থ্যে আমি যদি এতিমখানায় ১ মাসের খাবার দিই, আপনি ২ মাসের দিন, না পারলে ২ দিনের দিন। আমি ১শ কম্বল দিলে আপনি ৫শ দিন, না পারলে ৫টি দিন। কারো ক্ষতি করে কেউ বড় হতে পারে না। বরংচ সমাজের আবর্জনায় পরিণত হবেন। এখনো সময় আছে নোংরা মানসিকতা পরিহার করে অন্তত মানুষের উপকারে আসেন।
মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ ইউসুফ ও সাধারণ সম্পাদক শওকত নোমান বলেন, প্রায় শত বছরের পুরনো এই মসজিদে অর্ধ শত বছর বিনা পারিশ্রমিকে ইমামতি করেন হযরত আলহাজ্ব ওছমান আলী মাস্টার (রহ.)। তাঁরই সুযোগ্য দৌহিত্র শওকত বাঙালি আমাদের গ্রামকে নানাভাবে সাজানোর যে প্রক্রিয়া নিয়েছেন সেটির অসাধারণ উদ্যোগ সম্মিলিত ইফতার। এমন উদ্যোগ একশ’ বছরে আমাদের গ্রামে কেউ নেয় নি। তিনি যে সাম্যের গ্রাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন, সেটি সফল হোক। শওকত বাঙালির জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন এই দুই সমাজ সেবক।