ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করছে কানাডা

ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ দেয়া স্থগিত করছে কানাডা। বুধবার এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলির অফিস। তাদের এই সিদ্ধান্তে ইসরাইলি নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিতে পারে। এমনিতেই গাজায় নৃশংসতা, ‘যুদ্ধাপরাধের’ অভিযোগে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বার বার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গাজায় সাধারণ মানুষকে এভাবে নির্বিচারে হত্যার ফলে দিন দিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিঃসঙ্গ হয়ে যাবে ইসরাইল। এরই মধ্যে তাদের হামলায় প্রায় ৩২ হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের রক্তে ভেসে যাচ্ছে গাজার মাটি। মানুষ এখন জীবন বাঁচানোর জন্য যা-তা খাচ্ছে। পানের পানি নেই। জ্বালানির সঙ্কট।

অসংখ্য শিশু আছে, তাদের পিতা বা মাতা, অথবা পিতামাতা কেউ বেঁচে নেই। এসব শিশু বেঁচে আছে আল্লাহর ইচ্ছায়। বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, দখলীকৃত ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ড এখন পাহাড়সম মানবিক সঙ্কট মোকাবিলা করছে। কয়েক মাসের যুদ্ধে সেখানকার কয়েক লাখ মানুষ এখন দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কানাডা। তারা ইসরাইলকে বছরে শত শত কোটি ডলারের সামারিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এরই মধ্যে তারা ইসরাইলে তাদের শিপমেন্ট কমিয়ে দিয়েছে। শুধু সরবরাহ দিচ্ছিল প্রাণঘাতী নয় এমন সরঞ্জাম। এর মধ্যে আছে রেডিও। মেলানিয়া জোলির অফিস থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৮ই জানুয়ারি থেকে ইসরাইলে নতুন করে অস্ত্র রপ্তানি অনুমোদন করেনি সরকার। আমরা যে শাসকগোষ্ঠীকে অস্ত্র রপ্তানি করছি, তারা পূর্ণাঙ্গভাবে নীতি মেনে না চলা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। ইসরাইলে প্রাণঘাতী পণ্যের রপ্তানি করার ক্ষেত্রে কোন মুক্ত অনুমোদন নেই।

এতে আরও বলা হয়, ৮ই জানুয়ারির আগে যেসব রপ্তানিতে অনুমোদন ছিল তার ওপরও এর প্রভাব পড়বে।

মঙ্গলবার কানাডা সরকারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে পরিস্থিতি যা তাতে এসব সরঞ্জাম রপ্তানি করতে পারি না আমরা। যেসব অস্ত্র বড় রকম সামরিক অভিযানে ব্যবহার করা হবে, তা রপ্তানি করতে পারি না আমরা। তবে কানাডা সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ইসরাইলি নেতারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেন, হামাসের উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করবে এই সিদ্ধান্ত। এক্সে তিনি লিখেছেন, কানাডার বর্তমান কর্মকাণ্ড কঠোরভাবে বিচার করবে ইতিহাস।

তবে কানাডা সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টে লিখেছেন, গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। সেখানে ব্যাপক পরিমাণ এবং ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মানুষ অনাহারে কাটাচ্ছেন। এর প্রেক্ষিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ ‘মেশিনে’ সমর্থন দেয়া উচিত হবে না যুক্তরাষ্ট্রের। ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহের ইস্যুতে বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু দেশে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কানাডায় ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আইনজীবিদের জোট ও নাগরিকরা মার্চের শুরুর দিকে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করার আবেদন জানিয়ে অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ দিয়ে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণভাবে আইন লঙ্ঘন করছে অটোয়া।
কানাডার সবচেয়ে বেশি অস্ত্র পায় ইসরাইল। ২০২২ সালে ইসরাইলে তারা কানাডিয়ান ২ কোটি ১০ লাখ ডলারের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৬০ লাখ। এসব হিসাবে কানাডার কাছ থেকে যারা অস্ত্র আমদানি করে তার শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ইসরাইল অন্যতম।